ভিডিও বার্তা ঘিরে বিতর্ক। — ফাইল চিত্র।
চাকরি এবং সরকারি প্রকল্পে বাড়ি দেওয়ার নামে দলেরই একাংশ টাকা নিচ্ছেন। তৃণমূলের ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের মুখে এমনই মন্তব্যের একটি ভিডিয়ো (সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় জেলা রাজনীতিতে চর্চা শুরু হয়েছে। প্রদীপের অবশ্য দাবি, “আমি কিছু বলিনি। হয়তো প্রযুক্তিগত কারচুপি করে কেউ আমার মুখে দল-বিরোধী কথা বলে বসিয়ে দিয়েছে।” তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যি প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতিতে নিজের অফিসের চেয়ারে বসে প্রদীপ নাম না করে একের পর এক স্থানীয় নেতানেত্রী ও পঞ্চায়েতের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে যাচ্ছেন। তাঁর মুখে শোনা যায়, “বাঁকুড়া জেলায় আমার দলের বহু নেতানেত্রী দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেছেন। কেউ ঘর দিয়েছেন, কেউ চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছেন। কেউ গরীব মানুষের কাছে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন, কেউ এসসি-এসটিদের কাছে দু’হাজার টাকা করে নিয়েছেন। আগামী দিনে পঞ্চায়েত নির্বাচন যখন ঘোষণা হবে, তখন আপনারা জানতে পারবেন কোন নেতা-নেত্রীরা যুক্ত আছেন।” তাঁকে বলতে দেখা যায়, ‘‘অঞ্চল সভাপতিরা নিজেদের ইচ্ছা মতো পঞ্চায়েতের টিকিট বণ্টন করছেন। পঞ্চায়েতের অফিসার, কর্মীরা টাকা লুট করছেন। প্রধানেরা চার আনা পাচ্ছেন, আধিকারিকেরা বারো আনা পাচ্ছেন। আমি ডিএমকে, ডিপিআরডিওকে চিঠি করেছিলাম।”
জেলা প্রশাসনের তরফে কেউ প্রদীপের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূল পরিচালিত ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির দু’দফার সহ-সভাপতির এহেন মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দলের অন্দরেই জোর প্রতিক্রিয়া মিলেছে।
ওন্দা ব্লক তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পাবেন না এমন আশঙ্কায় ভুগে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন প্রদীপ। তার ফলেই এমন মন্তব্য করেছেন। ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা ওন্দা ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ভবানী মোদক বলেন, “সরকারি অফিসে বসে এমন মন্তব্য করাকে মেনে নেওয়া যায় না। দলের জেলা সভাপতির কাছে প্রদীপকে বহিষ্কাকের দাবি জানিয়েছি।” ওন্দা ব্লক তৃণমূল সভাপতি উত্তম বিট বলেন, “ওঁর বিরুদ্ধে দল শীঘ্রই কিছু ব্যবস্থা নেবে। আমরাও ব্লক কমিটির বৈঠক করব।”
ওন্দার বিজেপি বিধায়ক অমরনাথ শাখা বলেন, “তৃণমূলের মুষলপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। গোটা দলটাই দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে। যিনি এই সব অভিযোগ তুলেছেন, সেই প্রদীপের বিপুল সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে জনমানসে।” প্রদীপ অবশ্য এমন কোনও মন্তব্য করেননি বলে দাবিকরে আসছেন।