আদ্রার রাম মন্দিরে গেলেন তৃণমূল নেতা ধনঞ্জয় চৌবে। নিজস্ব চিত্র
দিকে-দিকে বিজেপি নেতা-কর্মীরা রামমন্দিরের ভিত পুজো উপলক্ষে বুধবার যখন পুজোপাঠে মাতলেন, সেই সময়ে আদ্রায় রামমন্দিরে গিয়ে পুজো দিলেন এক তৃণমূল নেতা। তাতে আলোড়ন পড়েছে জেলা রাজনীতিতে।
পুজো শেষ করে তৃণমূলের আদ্রা শহর কমিটির সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবে দাবি করেন, ‘‘রাম সমস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবতা। আমি নিজে হিন্দু, তাই রাম মন্দিরে পুজো দিয়েছি। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” কিন্তু বিজেপি নেতা-কর্মীদের মতো এ দিনই কেন তিনি পুজো দিলেন? ধনঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘রাম কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পদ নয়। হিন্দুদের দেবতা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে এ দিন অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের ভিত পুজো হয়েছে। তাই দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে পুজো দিয়েছি।” তবে এ বারই প্রথম নয়। আগে রামনবমীর দিনে শোভাযাত্রা বার করা থেকে রামমন্দিরের পুজোতে বরাবর তাঁকে আগ্রণী ভূমিকায় আদ্রার মানুষ দেখেছেন।
তবে জেলার রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ধনঞ্জয়বাবুর ধর্ম বিশ্বাস যা-ই হোক, রেলশহর আদ্রায় তাঁর এ দিনের ভূমিকার অন্য তাৎপর্যও রয়েছে। রেলশহর আদ্রার বুথগুলিতে লোকসভা ভোটের নিরিখে বিজেপির থেকে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এখানে হিন্দিভাষী মানুষের সংখ্যাও কম নয়। ফলে, রামকে শরণ করার সঙ্গে হিন্দিভাষী ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টাও করা হতে পারে।
আদ্রার বাসিন্দা বিজেপির জেলা সম্পাদক তথা যুব মোর্চার জেলা সভাপতি রাজেশ চিন্না ধনঞ্জয়বাবুর রামমন্দিরে পুজো দেওয়ার ঘটনাকে কটাক্ষ করে বলছেন, ‘‘তৃণমূল বুঝে গিয়েছে এই পরিস্থিতিতে তাঁদের রামের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোনও গতি নেই। তাই রামমন্দিরে পুজো দিয়েছেন ধনঞ্জয়বাবু। কিন্তু এ সব করে তিনি ভোটারের মন পাবেন না। হয়তো তিনি এ বার বিজেপিতে যোগ দেবেন বলেই এ সব করছেন।’’ যদিও তা উড়িয়ে ধনঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘বিজেপি নেতারা প্রলাপ বকছেন। রাম সমস্ত হিন্দুর দেবতা। ওঁদের সম্পত্তি নয়। তৃণমূল ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই।’’
দুপুর ১২টা নাগাদ ২০-২৫ জন অনুগামীকে নিয়ে রামমন্দিরে মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজো দেন ধনঞ্জয়বাবু। আরতি করা, রামের বিগ্রহকে স্নান করিয়ে সিংহাসনে বসানো সমস্ত কাজই তিনি করেন। তবে তৃণমূলেরই নেতা ‘লকডাউন’-এর বিধি ভেঙেছেন বলে অভিযোগ তুলছে বিজেপি। বিজেপির জেলা যুব মোর্চা সভাপতির দাবি, ‘‘তৃণমূলের রাজ্য সরকার ‘লকডাউন’ ডাকছে, আর ওদের নেতাই তা ভাঙলেন। দেখি, পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়।’’ ধনঞ্জয়বাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘লকডাউনে রাজ্য সরকার ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন বন্ধ করেনি। আমরা দল বেঁধে বেরিয়ে পুজো দিইনি। সকলেই পৃথক ভাবে মন্দিরে এসেছিলেন।’’ তবে ‘লকডাউন’-এ মন্দিরে গিয়ে জমায়েত করে পুজো দেওয়া কাম্য নয় বলেই মনে করছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। পুরুলিয়ার সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লকডাউনে ধর্মাচারণে কোনও বাধা নেই। তবে ‘লকডাউন’-এর দিনে জমায়েত করে পুজো দেওয়া হলে সেটা কাম্য নয়।”