বেনিয়ম: সাঁইথিয়ায় এ ভাবেই সেতুর কাছে নদীগর্ভ থেকে তোলা হচ্ছে বালি।
সরকারি নিয়ম ভেঙে বালি পাচারের অভিযোগে দু’টি ট্রাক্টর আটক করল সাঁইথিয়া থানার পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে তালতলা মোড়ের কাছে ওই ট্রাক্টরগুলিতে বালি বোঝাই করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে ট্রাক্টর আটক করে। তবে চালক ও অন্য কর্মীরা পালায়।
বালি পাচার নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, অবৈধ ওই কাজে পুলিশ-প্রশাসন এবং শাসক দলের কয়েক জন নেতাও জড়িত। ওই এলাকায় অবৈধ ভাবে বালি পাচারের অভিযোগ এই প্রথম নয়। সাঁইথিয়া ও ময়ূরেশ্বর থানার বিভিন্ন জায়গায় ময়ূরাক্ষী নদী থেকে বালি পাচারের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের নালিশ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের নেতাদের কেউ কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে বেআইনি বালি পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তাই পুলিশ-প্রশাসন সব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকে। আবার কোথাও আর্থিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বেআইনি বালি পাচারে মদত জোগানোর অভিযোগও ওঠে পুলিশ- প্রশাসনের কয়েক জন কর্মীর বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এর ফল ভোগ করতে হয় এলাকাবাসীকে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, নদীর জল মেশানো বালি-বোঝাই গাড়ি যাতায়াতের ফলে অল্প সময়েই রাস্তা ভেঙেচুরে বেহাল হয়ে পড়ছে। অভিযোগ, বালির গাড়ি থেকে ‘তোলা’ তুলছেন পুলিশকর্মীদের একাংশ। তাতে হচ্ছে যানজট।
এলাকাবাসীর কয়েক জন জানান, এখন নতুন কায়দায় পাইপ বসিয়ে পাম্পের সাহায্যে নদীগর্ভ থেকে বালি তোলা হচ্ছে। তার জেরে কখনও কখনও ধস নামছে নদীর চরে। পাশাপাশি স্নান করতে গিয়ে চোরাবালিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও ছড়িয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বছরখানেকের মধ্যে সাঁইথিয়া থানা এলাকায় নদীতে স্নান করতে নেমে প্রায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের নালিশ, সেতু সহ বিভিন্ন সরকারি নির্মাণ এমনকী লোকালয় সংলগ্ন এলাকাতেও ওই ভাবে বালি তুলে নেওয়া হচ্ছে। তাতে ওই সব নির্মাণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকছে। নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার ভয় থাকছে লোকালয়ের।
অবৈধ বালিঘাট বন্ধের দাবিতে বছরখানেক আগে ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া ও এলাকাবাসী সিউড়ি-বহরমপুর সড়ক অবরোধ করেন। প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের নালিশ, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই দলের নেতাদের কয়েক জন অবৈধ বালিঘাটের কারবারে যুক্ত থাকেন। মাঝে মধ্যে লোকদেখানো ধরপাকড় করা হয়। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয় না।
ময়ূরাক্ষী থেকে বালি তুলে আসার পথে আটক ট্রাক্টর। ছবি: কল্যাণ আচার্য
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম এবং বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের দাবি— তাঁদের দলের কেউ কখনও অবৈধ বালিঘাটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এখনও নেই। তাঁরা এ জন্য আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের দিকেই।
অভিযোগ উড়িয়ে জেলা পরিষদ সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের দলের কেউ অবৈধ বালিঘাটের ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন বলে জানা নেই। দলমত নির্বিশেষ বেআইনী বালি পাচার রুখতে ধারাবাহিক ভাবে প্রশাসনিক অভিযান চলছে।’’ বালিঘাটে আর্থিক বোঝাপড়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ জানায়, ট্রাক্টর দু’টির মালিকের খোঁজ চলছে। তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।