প্রতীকী ছবি।
অবেশেষে রঘুনাথপুর মহকুমার দুই ব্লকের সভাপতির নাম ঘোষণা করলেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার পাড়া ও রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সভাপতি, চেয়ারম্যান এবং দু’জন করে কার্যকরী সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয় নেতৃত্বের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে অবশ্য মানছেন, পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করা হলেও দলের অন্দরে ‘কোন্দলের কাঁটা’ উপড়ে ফেলা যায়নি। কারণ, পদাধিকারী নির্বাচন সর্বসম্মত হয়নি।
পাড়ার তৃণমূল ব্লক সভাপতি করা হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জয়মল ভট্টাচার্যকে। চেয়ারম্যান করা হয়েছে বর্ষীয়ান নেতা গোকুলেশ্বর সাহাবাবুকে। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সভাপতি হয়েছেন বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। চেয়ারম্যান হয়েছেন পুরনো ব্লক সভাপতি বরুণ মেহেতা।
তৃণমূল সূত্রের খবর, পাড়া এবং রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে দলে নানা গোষ্ঠীর ‘বিরোধ’ চলছিল। সে কারণে ওই পদগুলিতে নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছিল না। গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ভারসাম্য রেখে পাড়া ও রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সভাপতি, চেয়ারম্যান এবং কার্যকরী সভাপতির নাম এক সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে। ওই দুই ব্লকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, সভাপতি ও চেয়ারম্যান নির্বাচনে তাঁর মতামতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে, ভারসাম্যের নীতিতে পদাধিকারী নির্বাচিত হলেও দলের কোন্দল কমবে না বলে আশঙ্কা কর্মীদের একাংশের।
এই আশঙ্কা যে অমূলক নয় তার ইঙ্গিত মিলেছে এদিন। তৃণমূল সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের কার্যকরী সভাপতি প্রভাস বাউড়ি এ দিন পদত্যাদের ইচ্ছে প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছেন। ওই ব্লক তফসিলি জাতি অধ্যুষিত। তাই তফসিলি জাতিভুক্ত কাউকে ব্লক সভাপতি করার দাবি উঠেছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় প্রভাসবাবু পদত্যাগ করতে চেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
সোমবার সুজয়বাবু বলেন, ‘‘দুই ব্লকে সভাপতি ও চেয়ারম্যান কাদের করা হবে তা নিয়ে আমার সঙ্গে কোনও আলোচনাই করেননি জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো।” দুই ব্লকের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে তিনিও সরে যেতে চাইছেন বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন সুজয়বাবু।
এ বিষয়ে শান্তিরামবাবুর প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। জয়মলবাবু এবং সঞ্জীববাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘দলে দ্বন্দ্ব নেই। সকলকে নিয়ে সংগঠন গুছনোর কাজ শুরু করব। নিচুতলার কর্মীদের মত নিয়ে দল পরিচালনা করা হবে।”
এ দিকে, রঘুনাথপুর ১ ও সাঁতুড়ির ব্লক সভাপতি কে হবেন তা এখনও ঠিক করতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। ফলে, হতাশ ওই দুই ব্লকে দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ। দুই ব্লকের সভাপতি হওয়ার দৌড়ে থাকা কয়েকজন নেতার কথায়, ‘‘পাড়া ও রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সভাপতি ও চেয়ারম্যানের নাম ঘোযণা করা হয়েছে। কিন্তু কেন আমাদের দু’টি ব্লকের সভাপতি ও চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করা গেল না, তা বোধগম্য হচ্ছে না।”
যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, খুব দ্রুত ওই দুই ব্লকের সভাপতিদের নাম ঘোষণা করে দেওয়া হবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর ২ এবং সাঁতুড়ি ব্লকের সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে দলের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রঘুনাথপুর মহকুমার চারটি ব্লকেই কার্যত ভরাডুবি হয়েছিল তৃণমূলের। সাঁতুড়ি, পাড়া, রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিল শাসক দল। যদিও পরে বিজেপির জয়ী কয়েকজন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে তিনটি সমিতিতেই বোর্ড গড়েছিল শাসকদল। পঞ্চায়েত ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করে বিজেপি। মহকুমার এই চার ব্লকেই বিজেপির জমি যে ক্রমশ শক্ত হচ্ছে, তার প্রমাণ মেলে লোকসভা ভোটে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরেই চারটি ব্লকে তৃণমূলের দলীয় সভাপতিদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দলের কাজকর্মের দায়িত্ব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় দুই বিধায়ককে। কিন্তু চারটি ব্লকের নেতা-কর্মীদের বড় অংশের বক্তব্য ছিল, সরকারি দায়িত্ব সামলে বিধায়কদের পক্ষে সংগঠনের কাজকর্ম পরিচালনা করতে সমস্যা হচ্ছে। স্থায়ী সভাপতি নিয়োগের দাবি তুলেছিলেন তাঁরা।