বিধ্বস্ত: বিস্ফোরণে উড়েছে বাড়ির টিনের চাল। ইলামবাজারে। —নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘিরে উত্তাপ ছড়াল ইলামবাজারের রাজনৈতিক মহলে। বিরোধীরা এ জন্য দুষছে শাসক দলকে। তাদের অভিযোগ, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মিনু শেখের বাড়িতে ওই বিস্ফোরণে স্পষ্ট, ভোটের আগে সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে শাসক দল। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি, দলবিরোধী কাজের জন্য মাসতিনেক আগেই বহিষ্কার করা হয়েছিল মিনু শেখকে।
বুধবার সন্ধ্যায় ওই বিস্ফোরণ ঘটে ইলামবাজারের ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাইকুনি গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ প্রচণ্ড আওয়াজে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। এলাকার বাসিন্দারা দেখেন, মিনু শেখের বাড়ির এক দিকের টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। ঘটনার সময় বাড়ির সবাই ঘরে থাকলেও বরাতজোরে বেঁচেছেন।
এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, একতলা বাড়ির ছাদে বোমা মজুত রাখা হয়েছিল। খবর পেয়ে বুধবার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ইলামবাজার থানার পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকেই কিছু নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান তদন্তকারীরা। ঘটনার পর থেকেই পলাতক মিনু শেখ। পুলিশ তাঁর দুই ভাই, মতিউল্লা মোল্লা ও আমানুল্লা মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে।
বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, সম্প্রতি ইলামবাজারে তৃণমূলের এক সভায় দলের ব্লকস্তরের এক নেতা প্রকাশ্যে বলেছিলেন— ‘‘একের বদলে ১১টা বোমা মারা যায়।’’ বিজেপির অভিযোগ, বুধবারের ঘটনায় তার প্রস্তুতিরই প্রমাণ মিলেছে।
বিজেপি জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘নির্বাচন আসছে। তার আগে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ঘরে ঘরে বোমা মজুত করছেন সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য। এর আগেও ইলামবাজার, পাড়ুইয়ে প্রচুর বোমা উদ্ধার হয়েছে। বীরভূম আজ বারুদের স্তূপে পরিণত হয়েছে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তীর্থভূমিকে বোমায় ঘিরেছে শাসক দল।’’
জেলা পরিষদ সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল বোমা-বন্দুকের রাজনীতি করে না। ওই বাড়িতে বোমা মজুত ছিল না কেউ সে সব রেখেছিল তা নিয়ে তদন্ত চলছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলবিরোধী কাজের জন্য মাসতিনেক আগেই তৃণমূলের ধরমপুর অঞ্চল কমিটি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল মিনু শেখকে। ইলামবাজার তৃণমূল ব্লক সভাপতি ফজরুল রহমান বলেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্ত লোকেদের জন্য আমাদের দলে কোনও জায়গা নেই।’’
এ দিকে বুধবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণের আতঙ্ক সেখানে বৃহস্পতিবার সকালেও কাটেনি। ওই বাড়ির ঠিক পাশেই মসজিদ। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ সফিউল্লা বলেন, ‘‘ওই সময় রাতের নমাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে মসজিদও। আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়।’’