ভোটে দাঁড়াতে দল বদলে ছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দল তাঁকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করে। এরপর কংগ্রেসের টিকিটে বিধানসভা ভোটে জয়লাভ করেন তিনি। তবে পুরসভায় এখনও তিনি তৃণমূলের কাউন্সিলর হিসেবেই রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিধায়কের কাউন্সিলর পদ খারিজের দাবি জানালেন তৃণমূলের পুরপ্রধান।
সম্প্রতি বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপার কাউন্সিলর পদ খারিজের আর্জি জানিয়ে সদর মহকুমাশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছেন তৃণমূল পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে বুধবার শুনানি ছিল বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালার কাছে। যদিও শম্পাদেবী সেই শুনানিতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। এ দিন যথারীতি তিনি অনুপস্থিত থেকেছেন।
তবে বহিষ্কার করার পর দল কারও কাউন্সিলর পদ খারিজ করার আবেদন করতে পারে কি না, তা নিয়েই শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “পুরনিয়মে বলা হয়েছে, দল থেকে বেরিয়ে কেউ যদি অন্য দলে যোগ দেন, তাহলেই দলবিরোধী আইনের বলে তার কাউন্সিলর পদ খারিজের আবেদন করা যেতে পারে।” বাঁকুড়া পুরসভার প্রাক্তন আধিকারিক সন্তোষ ভট্টাচার্য জানান, পশ্চিমবঙ্গ পুরআইনের ২১ বি ধারায় বলা হয়েছে যদি কোনও কাউন্সিলর একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচিত হয়ে পরে স্বেচ্ছায় সেই দলত্যাগ করেন, তবেই দলবিরোধী আইনের আওতায় পড়ে তাঁর কাউন্সিলর পদ খারিজ করার সুপারিশ তুলতে পারেন পুরসভার দলের নেতা।
কিন্তু ভোটের আগে দলীয় দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে শম্পাদেবীকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ ও জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। শম্পাদেবী নিজে থেকে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেননি। সেই সূত্র ধরেই শম্পাদেবী এ দিন দাবি করেছেন, “দলই তো আমাকে বহিষ্কার করেছে। তাহলে আমি কেন দলবিরোধী আইনে পড়ব?’’
আইনের ফাঁক দিয়ে শম্পাদেবী পার পেয়ে যেতে পারেন, তা বিলক্ষণ টের পেয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতারাও। তাই রাতারাতি সে দিনের সাংবাদিক বৈঠকে শম্পাদেবীকে বহিষ্কারের বদলে সাসপেন্ড করা হয়েছিল বলে দাবি করছেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁরা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, শম্পাদেবীকে বহিষ্কার করা হলে, তিনি তাহলে দলের সে সংক্রান্ত চিঠি দেখান।
জেলা সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, শম্পাদেবীর দলীয় সদস্যপদ খারিজ হয়নি। তাঁকে বহিষ্কারের কোনও চিঠিপত্র দেওয়া হয়নি। তাঁর আরও দাবি, “দল ওঁনাকে সাসপেন্ড করেছিল। একই ব্যক্তি পুরসভায় শাসকদলের কাউন্সিলর আর বিধানসভায় বিরোধী দলের বিধায়ক হয়ে কাজ করবেন, এমন নজির নেই।’’ এক কদম এগিয়ে তিনি শম্পাদেবীর বিধায়ক পদটিও আইনগত ভাবে অবৈধ বলেও দাবি করেছেন তিনি।
পুরপ্রধান মহাপ্রসাদবাবুর কথায়, শম্পাদেবী দলবিরোধী কাজ করেছেন বলেই তাঁর কাউন্সিলর পদ খারিজের জন্য তিনি আবেদন করেছেন। শম্পাদেবী অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড়। তাঁর কথায়, “দলের জেলা সভাপতি নিজে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ডেকে আমাকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তৃণমূলে আবার লিখিত ভাবে কাউকে বহিষ্কার করা হয় নাকি? এখানে যা হয় সবই তো মৌখিক।” তাঁর কথায়, বিধানসভা ভোটের হার এখনও হজম করতে পারছে না তৃণমূল। তাই তাঁকে বিভ্রান্ত করতেই এই সব করা হচ্ছে। তিনি এ নিয়ে আইনের পথে যাবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।
বাঁকুড়া মহকুমা শাসকের ডাকা শুনানিতে কেন গেলেন না, জানতে চাওয়া হলে শম্পাদেবী বলেন, “সামনেই বিধানসভার অধিবেশন পর্ব শুরু হবে। তার প্রস্তুতিতেই ব্যস্ত রয়েছি। তাই কিছু দিন সময় চেয়ে আবেদন করেছিলাম।” জেলা প্রশাসন অবশ্য তাঁকে সময় দেয়নি। মহকুমাশাসক বলেন, “শুনানিতে শম্পাদেবী উপস্থিত ছিলেন না। সেটাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।”