পুরুলিয়া ছেড়ে ঝাড়খণ্ডে ফিরল বাঘ। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
আট দিন ধরে পুরুলিয়ার বিভিন্ন জঙ্গলে বনকর্মীদের কার্যত নাকানিচোবানি খাওয়ায় ভিন্রাজ্য থেকে ঢুকে পড়া বাঘ। সেই বাঘকে ধরতে বিভিন্ন কৌশল নেন বনকর্মীরা। ফাঁদ পাতেন, খাঁচা বসান— কিন্তু কিছুতেই ধরা দেয়নি সে। তবে সোমবার বনকর্মীরা খবর পান ওই বাঘ ফিরে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডে। সেখানকার ঘাঁটিকুলির জঙ্গলে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে এক প্রকার নিশ্চিত হয়েছেন বনকর্মীরা। তার পরই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন তাঁরা। তবে এখনই নজরদারি সরাতে নারাজ বন দফতর। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘটি আবার পুরুলিয়ায় ফিরে আসছে কি না, তা দেখার জন্য আগামী দু’দিন পুরুলিয়ার বিভিন্ন জঙ্গলে মোতায়েন থাকছেন বনকর্মীরা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, গত বছরের শেষ দিকে ওড়িশা থেকে আসা জ়িনত বাংলার জঙ্গলমহলে ঢুকে যে যে এলাকায় বিচরণ করেছিল, নতুন বাঘটিও সেই সেই এলাকায় যায়। খুব সম্ভবত বাঘিনি জ়িনতের খোঁজেই জঙ্গলমহলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ‘প্রেমিক’ বাঘটি। গত ১৩ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডের সীমানা পেরিয়ে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির জঙ্গলে ঢুকে পড়ে ওই বাঘটি। সেখানে এক দিন কাটিয়ে পরের দিনই বাঘটি হাজির হয় পুরুলিয়ার বান্দোয়ান বনাঞ্চলের রাইকা পাহাড়ে। টানা ৮ দিন রাইকা পাহাড় এবং তার পার্শ্ববর্তী ভাঁড়ারি ও যমুনাগোড়া পাহাড়েই নিজের গতিবিধি সীমাবদ্ধ রেখেছিল বাঘটি।
গত আট দিন ধরে বাঘকে খাঁচাবন্দি করতে নানা ফন্দি এঁটেছে বন দফতর। রাইকা পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় খাঁচা পাতার পাশাপাশি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়। রাইকা পাহাড়ের আশপাশে মোতায়েন করা হয় বনকর্মীদের বিশাল বাহিনী। রাইকা, ভাঁড়ারি ও যমুনাগোড়া পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে বাঘের পায়ের ছাপই প্রমাণ দেয় বাঘের উপস্থিতি। শুধু তা-ই নয়, পর পর দু’দিন ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে বাঘের ছবি।
ট্র্যাপ ক্যামেরায় বাঘের ছবি ধরা পড়তেই বাঘটিকে ধরতে সক্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দেয় বন দফতর। হুলা পার্টি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে মোট ১৪টি দল গঠন করে শনিবার থেকে রাইকা, ভাঁড়ারি ও যমুনাগোড়া পাহাড় জুড়ে চিরুনিতল্লাশি শুরু করে তারা। কিন্তু সেই বাঘকে ধরতে পারেননি বনকর্মীরা।
বনকর্মীদের লাগাতার অভিযানের মধ্যেই সোমবার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ঘাঁটিকুলির জঙ্গলে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান বনকর্মীরা। সেই ছাপ দেখে একপ্রকার নিশ্চিত হওয়া যায়, বাঘ ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে গিয়েছে। এর পরই এ রাজ্যের বন দফতর যোগাযোগ করে ঝাড়খণ্ডের বন দফতরের সঙ্গে। ঝাড়খণ্ডের বন দফতর জানায়, বাংলা-ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া ডোমকাকচার জঙ্গলে প্রবেশ করেছে বাঘটি। সীমানাবর্তী ওই জঙ্গল থেকে যে কোনও সময় বাঘটি আবার বাংলামুখী হতে পারে। এই আশঙ্কায় নিজেদের নজরদারি হ্রাস করেনি বন দফতর। তবে মঙ্গলবার সকালে বন দফতর জানতে পারে, বাঘটি ডোমকাকচার জঙ্গল থেকে দলমামুখী হয়ে আরও গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করেছে।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলানডাইভেল বলেন, ‘‘বাঘের পায়ের ছাপ দেখে এবং ঝাড়খণ্ড বন দফতরের তরফে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এটা বলা যায় যে, বাঘ এ রাজ্যের সীমানা পেরিয়েছে। মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ডের আরও গভীর জঙ্গলের দিকে চলে গিয়েছে বাঘটি। তবে এখনই আমরা নজরদারি কমানোর কথা ভাবছি না।’’