Kanak Durga Of Joypur

কনকদুর্গা ‘বন্দি’ লকারেই

রাজপরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে মারা যান দুই বংশধর শঙ্করনারায়ণ সিংহ দেও এবং প্রণবকুমার সিংহ দেও।

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৩
Share:

কনকদুর্গা। ফাইল চিত্র

রঙের পোঁচ পড়েছে রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে। সন্ধিপুজোয় যে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হয়, ঝাড়পোঁছ হচ্ছে তা-ও। শুধু পুরুলিয়ার ব্যাঙ্কের লকার থেকে এ বার কনক দুর্গা আসছে না জয়পুরের রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে।

Advertisement

সামনে-পিছনে সশস্ত্র পুলিশ পাহারায় রাজপরিবারের বংশধরেরা স্বর্ণনির্মিত দেবী বিগ্রহ ঠাকুরদালানে আনার দৃশ্য এ বারে দেখবে না জয়পুর। কালাশৌচ চলায় রাজবংশের কেউই বিগ্রহ স্পর্শ করতে পারবেন না, এমনই বিধান পুরোহিতের।

রাজপরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে মারা যান দুই বংশধর শঙ্করনারায়ণ সিংহ দেও এবং প্রণবকুমার সিংহ দেও। রাজবাড়ির বরিষ্ঠ সদস্য প্রশান্তনারায়ণ সিংহ দেওয়ের কথায়, ‘‘গত বছর মহাষ্টমীর রাকে অখণ্ড জাগর প্রদীপ একবার নিভে যাওয়ায় মন অমঙ্গলের ইঙ্গিত দিয়েছিল। পুজোর কয়েক মাসের মধ্যে আমার দু’ভাই চলে গেল। তাই কালাশৌচের কারণে এ বারে আমরা দেবীর বিগ্রহ স্পর্শ করতে পারব না।’’ তিনি জানান, তবে পুজো হবে রীতি মেনেই। রাজবাড়ির সদস্যেরা মন্দিরে পা দিতে পারবেন না। বাইরে থেকে পুজো দেখবেন।

Advertisement

কথিত রয়েছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী থেকে কোনও এক মুঘল সম্রাটের সেনাদের তাড়া খেয়ে রাজা জয়সিংহ ও তাঁর সঙ্গীরা জঙ্গলমহলের এই এলাকায় আসেন। পরে এখানেই তাঁরা রাজত্ব স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় এই এলাকা কোল, ভিল, মুন্ডাদের শাসনাধীন ছিল। খামার মুন্ডার সঙ্গে লড়াই হয় রাজা জয়সিংহের। তাঁকে পরাজিত করে এই এলাকার দখল নিয়ে রাজত্ব স্থাপন করেন তিনি। তাঁর নামানুসারেই এই
জনপদের নাম হয় জয়পুর।

রাজ পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রথমে শক্তির প্রতীক হিসেবে এখানে তরবারির পুজো হয়। যে তরবারি দিয়ে জয়সিংহ খামার মুন্ডার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। পরে দুর্গা প্রতিমা গড়ে পুজো শুরু হয়। ১৮৬৬ সালে অষ্টম রাজা কাশীনাথ সিংহের আমলে পুজোর সময় মন্দিরে রাখা অখণ্ড জাগর প্রদীপ উল্টে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। রক্ষা পায়নি দেবীমূর্তিও। পরিবারের অমঙ্গলের কথা ভেবে মন্দিরেই ধর্নায় পড়েন রাজা।

কথিত রয়েছে, দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে বারাণসীর স্বর্ণকারদের নিয়ে এসে দেবীমূর্তি তৈরি করানো হয়। রাজকোষের ১০৮টি স্বর্ণমুদ্রা এবং মণি-মাণিক্য দিয়ে বারাণসীর কনক দুর্গার আদলে এই দেবীমূর্তি তৈরি করানো হয়। দেবীর চালচিত্র তৈরি হয়েছে দেড় মন রুপো দিয়ে। তাই মহাষষ্ঠীতে ব্যাঙ্কের লকার থেকে দেবীকে মন্দিরে আনার পরেই দর্শনের জন্য বহু মানুষ ভিড় করেন। কোভিডের সময় ভিড় এড়াতে বিগ্রহ মন্দিরে আনা হয়নি।

দুষ্ট লোকের নজর কি পড়েনি? রাজপরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬৯ সালে ডাকাতদল হানা দেয় রাজবাড়িতে। ডাকাতেরা সোনাদানা-সহ প্রচুর বহুমূল্য গয়না লুট করলেও দেবীমূর্তি নিয়ে যেতে পারেনি। তৎকালীন পুলিশ সুপারের পরামর্শেই পুজোর সময় বাদে বিগ্রহ থাকে লকারবন্দি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement