Indian Cork

ডাঙা ছাড়িয়ে জলেও এ বার থার্মোকলের ভয়

মকর সংক্রান্তির অন্যতম আকর্ষণ নদী বা বড় জলাশয়ে চৌডল ভাসানো। এটি পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার দীর্ঘদিনের পরম্পরা। চৌডল তৈরি হত শোলা আর রঙিন কাগজ দিয়ে।

Advertisement

অভিজিৎ অধিকারী

জয়পুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৪
Share:

তৈরি হচ্ছে চৌডল। জয়পুরের পদুমপুরে। নিজস্ব চিত্র

শোলার জায়গা দখল করছে থার্মোকল। তা দিয়েই মকর সংক্রান্তির আগে তৈরি হচ্ছে চৌডল। আর চিন্তা বাড়ছে দূষণের।

Advertisement

মকর সংক্রান্তির অন্যতম আকর্ষণ নদী বা বড় জলাশয়ে চৌডল ভাসানো। এটি পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার দীর্ঘদিনের পরম্পরা। চৌডল তৈরি হত শোলা আর রঙিন কাগজ দিয়ে। জলে জন্মানো শোলা-গাছ ফিরে যেত জলেই। কিন্তু ইদানীং শোলা প্রায় দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে।

বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের রাউতখণ্ড পঞ্চায়েতের পদুমপুর গ্রামের মালাকারপাড়ায় শোলা শিল্পীরা রয়েছেন। তেমনই এক জন নিরঞ্জন মালাকার। প্রায় পঞ্চাশ বছর চৌডল বানাচ্ছেন তিনি। জানান, চাঁদমালা, টোপর আর ডাকের সাজ তৈরি করতে হাওড়ার আমতা থেকে শোলা আনেন। এখন এক গোছা মোটা শোলার দাম পড়ছে ৭০০ টাকা।

Advertisement

বারো বছর বয়সে বাবার কাছে শোলার কাজে হাতেখড়ি হয়েছিল নিরঞ্জনবাবুর। তিনি জানান, জেলার শোলা বছর পাঁচেক হল আর বাজারে মিলছে না। জোগান যখন ছিল, এক গোছা ২০০ টাকাতেই পাওয়া যেত। চৌডলও তৈরি করতেন তা দিয়ে। কিন্তু এখন চড়া দরে কিনে পড়তায় পোষায় না। নিরঞ্জনবাবু বলেন, “১৫ দিন ধরে চৌডল তৈরি করছি রঙিন কাগজ আর থার্মোকল দিয়ে। প্রায় ৫০টি তৈরি করেছি। ৬০ টাকা দরে বিক্রি হবে।’’ নির্মল মালাকার, কমল মালাকার, বিমল মালাকারেরা কেউ বানাচ্ছেন ৫০টি চৌডল। কেউ ১০০টি।

বাঁকুড়ার জয়পুর লাগোয়া বৃন্দাবনপুর, গোপবৃন্দাবনপুর, শ্যামদাসপুরে ঘরে ঘরে টুসু পরব হয়। মমতা বাগদি, হীরা বাউড়ি, ময়না বাউড়িরা বলেন, ‘‘আমরা আগে ১০-১৫ টাকায় শোলার ভেলা কিনেছি। এখন ভাল ভেলার দাম প্রায় ১০০ টাকা। বড় শোলার চৌডল এখন তো আর চোখেই পড়ে না। হাতের কাছে যা পাই, তা-ই কিনে আনি।” থার্মোকল তৈরি হয় পেট্রোলিয়ামজাত এক ধরনের পলিমার থেকে। তা জলে পচে না। মাটিতে মেশে না। পোড়ালে দূষণ হয়। জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে থার্মোকলের থালাবাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। কিন্তু থালাবাটি ছাড়া, নানা কাজে সস্তার এই জিনিস ব্যবহার করা হয়। উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ব্যবহারে লাগাম টানা মুশকিল বলে মানছেন প্রশাসনের কর্তাদের অনেকেই। থার্মোকলের কুফলের ব্যাপারে মানুষজনকে সচেতন করাই আপাতত তাঁদের একমাত্র হাতিয়ার।

শিল্পীরা চাইছেন, থার্মোকলের ব্যবহার রুখতে শোলায় নজর দিক প্রশাসন। মালাকারপাড়ার সমীর পাত্র বলেন, ‘‘শিল্পীদের অনুদান না দিলেও হবে। সুলভে শোলার যোগান দিলেই আমরাও বাঁচব, পরিবেশও বাঁচবে।’’ বিডিও (জয়পুর) বিট্টু ভৌমিক বলেন, ‘‘শোলা চাষ করার মতো অনেক জলাশয় রয়েছে। কৃষি দফতরের সঙ্গে এই ব্যাপারে আলোচনা করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement