মন্দিরের অদূেরই চলছে কাজ। গড় পঞ্চকোটের মন্দিরক্ষেত্র এলাকায়। ছবি: সঙ্গীত নাগ
পুরুলিয়ার গড় পঞ্চকোটের ‘হেরিটেজ’ মন্দিরক্ষেত্র এলাকায় থাকা প্রাচীন মন্দিরের পাশে, নির্মাণকাজের অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে জানিয়ে অবিলম্বে কাজ বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় ‘গড়পঞ্চকোট ধারাকল্যাণ সমিতি’। সমিতির সম্পাদক দিলীপকুমার দে-র বক্তব্য, “মন্দিরক্ষেত্র এলাকায় নির্মাণকাজ হলে ইতিহাসের মূল্যবান নিদর্শন হারিয়ে যাবে। কাজ বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।”
বিডিও (নিতুড়িয়া) অজয়কুমার সামন্ত বলেন, “মন্দিরের পাশে নির্মাণকাজ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।” তবে শুক্রবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কাজ চলছে জোরকদমেই।
জেলার লোক-গবেষকদের একাংশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ৯২০ খ্রিস্টাব্দের পরে, পঞ্চকোট রাজবংশের রাজা কীর্তিনাথ শেখর পাড়া থেকে পঞ্চকোট পাহাড়ে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। আনুমানিক ১৭৫০ সাল পর্যন্ত ওই বংশের রাজত্ব চলে। সে পর্বে পাহড়ে তৈরি হয়েছিল একাধিক পঞ্চরত্ন মন্দির। তবে সেগুলির মধ্যে কেবল রাস মন্দিরটির সংস্কার হয়েছে। এই মন্দিরটি-সহ বাকিগুলি জরাজীর্ণই।
তবে অভিযোগ, সম্প্রতি ওই মন্দিরক্ষেত্র এলাকায় ‘রায়তি’ জমিতে অতিথি নিবাস তৈরির কাজ শুরু করেছেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। ধারাকল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি স্বপন রায়ের দাবি, “২০১০-এ রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ওই মন্দিরক্ষেত্রকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে। তার পরেও, পাহাড়ের পঞ্চরত্নের মন্দির ও রানিমহলের (প্লট নম্বর ৮৪২ ও ৮৩৭) ঠিক পাশেই নির্মাণকাজ চলছে। মন্দির থেকে ফুট পনেরো দূরে যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার কারণে তৈরি কম্পনে ইতিমধ্যে মন্দিরের কিছু ক্ষতি হয়েছে।”
গণস্বাক্ষর করে ওই এলাকায় কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়েরাও। তাঁদের মধ্যে সনাতন মাজির দাবি, ওই এলাকায় যাতে কেউ নিজস্ব জমিতেও নির্মাণকাজ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে সরকার পদক্ষেপ করুক। লোক-গবেষক সুভাষ রায়েরও বক্তব্য, “গড় পঞ্চকোট হেরিটেজ সাইট। ওই এলাকার ইতিহাস নষ্ট হয়ে যাবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।”
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই ‘হেরিটেজ’ এলাকার সংস্কারে ইতিমধ্যে চার কোটির কিছু বেশি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কাজ করবে পূর্ত দফতর। আজ, শনিবার এলাকায় পরিদর্শনে যাওয়ার কথা পূর্ত দফতরের আধিকারিক ও মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর)-এর। বিডিও বলেন, “মহকুমাশাসক এলে ওঁর সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ হবে।” চেষ্টা করেও ওই ব্যবয়াসীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব আসেনি মেসেজের।