খোলা: বোলপুরের সুকান্তপল্লির বাড়িেত। নিজস্ব চিত্র
একটার পর একটা চুরি। কিন্তু কোনও ঘটনারই কিনারা করতে পারছে না পুলিশ। তারপরেও চুরি অব্যাহত। রবিবার সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনের পারুলডাঙা মাঠপাড়ায় একটি বাড়িতে তালা ভেঙে নগদ টাকা ও গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছে চোরেরা। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির মালিক সৌভিক কর মাত্র এক ঘণ্টার জন্য স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে স্থানীয় মকরমপুরে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে দেখেন সদর দরজা ভাঙা। ঘরের জিনিসপত্র ছড়ানো। সৌভিক বলেন, ‘‘মেয়েকে নাচের স্কুলে ছাড়তে গিয়েছিলাম সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ। ফিরে দেখি আলমারি ভেঙে চোরেরা নগদ চার হাজার টাকা ও হার, দুল-সহ সোনার গয়নাগুলো নিয়ে গিয়েছে।’’
শনিবার রাতেও চুরির চেষ্টা হয়েছে বোলপুরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্ত পল্লিতে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার নিত্যানন্দ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন কমলিকা দত্ত লাহা নামে এক সরকারি আধিকারিক। কলকাতার বাসিন্দা কমলিকাদেবী কর্মসূত্রে বোলপুরে থাকছেন বেশ কিছুদিন ধরে। কিন্তু সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভাড়া বাড়িটি তালাবন্ধ করে কলাকাতায় ফিরে গিয়েছেন। শনিবার রাতে ওই বাড়িতে চুরির চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ।
রবিবার সকালে গৃহকর্ত্রী শ্যামশ্রী মুখোপাধ্যায় খেয়াল করেন তালা তাঁর ভাড়াটের ঘরের দরজার নীচে ভাঙা তালাটি পড়ে আছে। পুলিশ জানিয়েছে, কমলিকাদেবী তখন ঘরে না থাকায় বাড়ি থেকে কি কি জিনিস চুরি গিয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তদন্তকারীদের দাবি, তালা ভেঙে চুরির চেষ্টা করা হলেও ঘর থেকে কোনও জিনিসপত্র নিয়ে যায়নি দুষ্কৃতীরা। ইতিমধ্যেই বোলপুরের বিভিন্ন এলাকায় চুরির ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয় বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর এবং একই সঙ্গে জানানো হয় পুলিশি টহলদারি বাড়ানোর কথা। প্রতিটি স্কুলে সিভিক ভলান্টিয়ার রেখে রাত পাহারা ও পাড়ায় পাড়ায় আরজি পার্টি গড়ে তোলার কথাও বলা হয়। কিন্তু চোরের দল এইসব ঘোষণা বা পরামর্শকে যে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে তা শনি ও রবিবারের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
সৌভিকবাবুর প্রশ্ন, ‘‘বাড়ি ফাঁকা রেখে কোথাও গেলে পুলিশকে জানাতে। কিন্তু মেয়েকে নাচের স্কুলে দিতে যাচ্ছি সেটাও কি থানায় জানিয়ে যাওয়া সম্ভব?’’
বোলপুরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, একের পর এক বাড়িতে চুরির ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। শান্তিনিকেতন বা বোলপুরের বহু পাড়াই যথেষ্ট ফাঁকা ফাঁকা। একটার পর একটা চুরির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এখনও কোনও ঘটনারই কিনারা করতে পারছে না। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, রবিবারের পরের হিসেব অনুযায়ী গত ৬ মাসে বোলপুর ও শান্তিনিকেতন থানা মিলিয়ে ৯টি বাড়িতে ও একটি স্কুলে পরপর তিনবার চোরেরা হানা দিয়েছে। স্কুলটির মিড ডে মিলের কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার ছাড়া কোনও চুরিরই কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা প্রতিটি চুরির ঘটনাই খতিয়ে দেখছি।’’