মহুদা স্কুলের পাশে। নিজস্ব চিত্র
নিম গাছের নীচে দূরে-দূরে ছড়িয়ে বসেছে ছোট ছেলেমেয়েরা। মুখে শিক্ষকদের কিনে দেওয়া ‘মাস্ক’। ৩ অগস্ট থেকে এ ভাবেই পড়াশোনায় ফিরেছে পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের কাশীবেড়া ও মহুদা প্রাথমিক স্কুল।
করোনা-পরিস্থিতিতে প্রায় মাস চারেক বন্ধ রয়েছে রাজ্যের স্কুলগুলি। কাশীবেড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রকাশ সিংহদেও তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের পুরুলিয়া জেলার কার্যকরী সভাপতি। তিনি এবং মহুদা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক চরণ মাহাতো জানান, তাঁদের স্কুল দু’টিতে অধিকাংশ পড়ুয়া নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসে। স্মার্টফোন প্রায় কারও নেই। ফলে, ‘অনলাইন’ পঠনপাঠন কার্যত কষ্টকল্পনা।
এ দিকে, প্রতি মাসে মিড-ডে মিলের চাল আর আলু নিতে এসে প্রচুর অভিভাবক জানাচ্ছিলেন, বাড়িতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে। জানতে চাইছিলেন, কবে খুলবে স্কুল? দুবড়া পঞ্চায়েতের দু’টি গ্রামের স্কুল দু’টির মধ্যে দূরত্ব মেরেকেটে পাঁচশো মিটার। সেই সূত্রে পড়ুয়াদের এক সঙ্গে এনে পড়ানোর পরিকল্পনা হয়। চরণবাবু জানান, দু’টি স্কুল মিলিয়ে পড়ুয়া রয়েছে ১০৮ জন। সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস হচ্ছে। কোনও দিন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির। কোনও দিন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির।
দু’টি স্কুল মিলিয়ে শিক্ষক আছেন মোট পাঁচ জন। তবে তিন জন বেশ দূরে থাকায় তাঁরা আসতে পারছেন না। প্রকাশবাবুর বাড়ি স্কুল থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে, রঘুনাথপুর শহরে। চরণবাবু থাকেন স্কুল থেকে ছ’কিলোমিটার দূরে, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের উকা গ্রামে। দু’জনেই নিজেদের মোটরবাইকে সপ্তাহে তিন দিন স্কুলে যাচ্ছেন।
চরণবাবু জানান, ছোট ক্লাসঘরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা মুশকিল। তাই মহুদা স্কুলের পাশেই একটি গাছের তলায় পঠনপাঠন হচ্ছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে ক্লাস বাতিল করে সে কথা আগে থেকে অভিভাবকদের ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাশীবেড়া স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র জিৎ বাউড়ি এবং মহুদা স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রূপা মুর্মু বলে, ‘‘বাড়িতে বসে ভাল লাগছিল না। স্কুল খোলায় ভাল হয়েছে।’’
দুই প্রধান শিক্ষকের অভিজ্ঞতা, চার মাস ধরে চর্চার অভাবে পুরনো পড়ার প্রায় সবটাই ভুলে গিয়েছে পড়ুয়ারা। প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘আপাতত পুরনো পড়া ঝালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পরে নতুন অধ্যায় শুরু করা হবে।” অভিভাবকদের মধ্যে বুদ্ধেশ্বর মুর্মু, রিঙ্কু মুর্মুরা বলেন, ‘‘সপ্তাহে তিন দিন হলেও পড়াশোনাটা যে হচ্ছে, সেটাই অনেক বড় পাওনা।” দু’টি গ্রামের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কিছু পড়ুয়াও যাচ্ছে ওই ক্লাসে। তাদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন দুই প্রধান শিক্ষক।
তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলার কার্যকরী সভাপতি প্রকাশবাবু জানান, সংগঠনের মধ্যেও এই ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আবেদন করেছি, এ ভাবে পড়ানোর শুরু করতে। অনেকেই উৎসাহ দেখিয়েছেন।’’
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি এখনও এই ব্যাপারে কিছু জানি না। পঠনপাঠন শুরু করতে হলে করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য-বিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা দরকার। ওই দু’টি স্কুলে কী হচ্ছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ তবে বিডিও (পাড়া) গৌতম মণ্ডল বলেন, ‘‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আর সর্তকতা মেনে পড়ানো হলে, সে উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।”