অন্য-দিকে: প্রশাসক হিসাবে শপথ নিচ্ছেন বাঁকুড়ার বিদায়ী পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত। উপস্থিত রয়েছেন প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান দিলীপ আগওয়াল। বুধবার। নিজস্ব িচত্র
পুরুলিয়ার তিন পুরসভার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হল না। অন্য পুরসভাগুলির মতো মেয়াদ শেষের পরে, পুরপ্রধানদেরই প্রশাসক পদে নিয়োগ করল রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর।
বুধবারই শেষ হয়েছে পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর ও ঝালদা পুরসভার বোর্ডের মেয়াদ। এ দিন দুপুরে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে তিন পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
আজ, বৃহস্পতিবার থেকে প্রশাসকের দায়িত্ব সামলাবেন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান, রঘুনাথপুরের মদন বরাট ও ঝালদার প্রদীপ কর্মকার। এই তিন পুরসভাতেই তৃণমূল ক্ষমতায় ছিল। প্রশাসকের দায়িত্বে পুরপ্রধানদের নিয়োগ করার পাশাপাশি, পরিচালন বোর্ডের সদস্য তালিকাও পাঠিয়েছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। পরিচালন বোর্ডে কোনও বিরোধী দলের সদস্যের নাম না থাকায় ক্ষুব্ধ বিরোধী দলগুলি।
গত পুরভোটে পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুরে সরাসরি ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। ঝালদায় কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছিল। পরে কংগ্রেসের বেশির ভাগ কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে, সেখানে বোর্ড গড়ে তৃণমূল। মেয়াদ শেষের পরে বাঁকুড়া ও পূর্ব বর্ধমানের মতো পুরুলিয়ার তিন পুরসভাতেও পুরপ্রধানদেরই প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করা হয় কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছিল জল্পনা।
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুরপ্রধানরাই যে প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পাবেন সেই ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত ছিলেন জেলা নেতারা। তবে পরিচালন বোর্ডে কারা থাকবেন, তা নিয়ে নানা মত উঠে আসছিল। দলের অন্দরেই পুরসভাগুলির তৃণমূলের কয়েকজন কাউন্সিলরের নাম শোনা যাচ্ছিল। তালিকা আসার পরে দেখা যাচ্ছে, পুরুলিয়ায় বোর্ডে আছেন তৃণমূলেরই উপপুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডল ও তৃণমূলের চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল ময়ূরী নন্দী, মৌসুমী ঘোষ ও মৌসুমী দত্ত। পরিচালন বোর্ডে রয়েছেন রঘুনাথপুরের উপপুরপ্রধান তরণী বাউড়ি ও ঝালদার উপপুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠক।
তিন পুরসভাতেই পরিচালন বোর্ডে বিরোধী দলনেতা বা বিরোধী কোনও সদস্যের নাম না থাকায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেস ও সিপিএম। পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুর-আইনে এমন নিয়ম না থাকলেও তৃণমূলের সরকার তাঁদের দলেরই পুরপ্রধানদের প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করেছে। গণতন্ত্রের বদলে দলতন্ত্রের নীতিতে রাজ্য সরকার কাজ করায় স্বভাবতই পরিচালন বোর্ডে স্থান দেওয়া হয়নি বিরোধী সদস্যদের।” রঘুনাথপুরের সিপিএমের নেতা লোকনাথ হালদার বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক নিয়মে চললে পরিচালন বোর্ডে বিরোধী দলের সদস্যদের রাখাটাই বাঞ্ছনীয়। এই ঘটনা আবার প্রমাণ করল, তৃণমূল কোনও দিনই গণতান্ত্রিক নিয়মনীতির ধার ধারে না।” ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন কান্দু বলেন, ‘‘পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক ভাবে বিরোধী দলের কোনও সদস্যকে পরিচালন বোর্ডে স্থান দেয়নি তৃণমূলের সরকার।”
তবে বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সম্পাদক নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, রাজ্যের অন্য বহু জায়গায় বিরোধীরা পুরবোর্ড পরিচলনা করছিলেন। সেখানেও বিরোধী পুরপ্রধানদেরকেই প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে।”