man

Archery: তিরন্দাজিতে পদক জিতেও সংসার চালাতে ভরসা দিনমজুরি

মানবাজারের জনড়া শবরপাড়ায় স্ত্রী, মা, দিদিকে নিয়ে তাঁর সংসার। সম্প্রতি আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন। সেখানেই থাকেন বছর ছত্রিশের গোপাল।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২২ ০৭:৪২
Share:

গোপাল শবর। নিজস্ব চিত্র।

রাজ্য ও জাতীয় স্তরের নানা প্রতিযোগিতায় তিনি পেয়েছেন সেরার শিরোপা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জিতে এনেছেন পদক। পেটের দায়ে সেই তিরন্দাজ এখন দিনমজুরি করছেন। পুরুলিয়ার মানবাজারের বাসিন্দা গোপাল শবর জানাচ্ছেন, স্থায়ী রোজগারের কোনও বন্দোবস্ত হয়নি। রেশনের চাল-গম আর দিনমজুরির আয়েই চলছে সংসার।

Advertisement

মানবাজারের জনড়া শবরপাড়ায় স্ত্রী, মা, দিদিকে নিয়ে তাঁর সংসার। সম্প্রতি আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন। সেখানেই থাকেন বছর ছত্রিশের গোপাল। সংসারে অনটনের কারণে অষ্টম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা করতে পারেননি। ‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি’র অন্যতম কর্তা প্রশান্ত রক্ষিত জানান, আগে প্রতি বছর সমিতির কার্যালয় চত্বরে শবর মেলায় তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা হত। তখন সমিতির কার্যনির্বাহী সভানেত্রী মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে কলকাতা থেকে অনেকে সে মেলায় আসতেন। এক বার সে ভাবেই আসা সাইয়ের এক কর্তার নজরে পড়ে যান তিরন্দাজি প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া গোপাল। কিশোর বয়স থেকে কলকাতায় সাইয়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন বছর দশেক। সে সময়ে রাজ্য ও জাতীয় স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যোগ দেন তিনি।

গোপাল জানান, ২০০০ সালে পঞ্জাব আর্চারি অ্যাসোসিয়েশন পরিচালিত ‘ন্যাশনাল আর্চারি চ্যাপিয়ানশিপ ফর বয়েজ অ্যান্ড গার্লস’ প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। এর পরে অওরঙ্গাবাদে ২০০২ সালে ‘অল ইন্ডিয়া ইন্টার সাই রিজিওনাল আর্চারি টুর্নামেন্ট’-এ সিনিয়র বিভাগে প্রথম হন। সে বছর ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট আর্চারি চ্যাম্পিয়ানশিপ’ প্রতিযোগিতাতেও প্রথম হন। ২০০৫ সালেও সিনিয়র বিভাগে প্রথম স্থান পান। ২০০৮ সালে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়শন আয়োজিত পুরুষ বিভাগে ‘ফিটা’ রাউন্ডে প্রথম হন।

Advertisement

গোপালের মা সুশীলা শবর বলেন, ‘‘গোপালের ছোটবেলায় ওর বাবা মারা যান। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে বড় করেছি। অনেক শংসাপত্র জিতে এনেছে, কিন্তু কোনও স্থায়ী রোজগারের ব্যবস্থা হয়নি।’’ স্ত্রী দীপালি শবরের বক্তব্য, ‘‘তিরন্দাজির দৌলতে স্বামী ভারতের নানা প্রান্তে গিয়েছেন। অনেক মেডেল পেয়েছেন। কিন্তু সংসারে কোনও সুরাহা হয়নি।’’ এখনও সুযোগ পেলে তিরন্দাজি প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন গোপাল। ২০১৮-১৯ সালে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের পরিচালনায় ‘হিমল তরাই ডুয়ার্স স্পোর্টস ফেস্টিভ্যাল’-এ প্রথম স্থান পেয়েছিলেন তিনি।

গোপালের আক্ষেপ, ‘‘অনেক সময়ে প্রশাসনের কর্তারা পিঠ চাপড়ে বাহবা দিয়েছেন। কখনও কেউ কেউ কিছু টাকাও হাতে গুঁজে দিয়েছেন। কিন্তু ছোটখাট কাজের ব্যবস্থাও হয়নি।’’ তিনি জানান, সংসার চালাতে বাগান পরিষ্কার, ঘরের ছাউনি তৈরির মতো নানা দিনমজুরির কাজ করেন। যেমন কাজ মেলে, তেমন আয় হয়।

খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির কর্তা প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘পুরুলিয়া জেলায় শবরদের মধ্যে মাত্র দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ পেয়েছেন। সমিতির তরফে প্রশাসনের কাছে গোপালের মতো কিছু শবর যুবক-যুবতীকে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে নিয়োগের অনুরোধ করা হয়েছে।’’ বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসক (মানবাজার) শুভজিৎ বসু বলেন, ‘‘উনি শংসাপত্রের কপি দিয়ে আমাদের কাছে আবেদন জানালে, জেলা যুব আধিকারিকের মাধ্যমে কাজের আবেদন কলকাতায় পাঠাতে পারি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement