প্রতীকী ছবি।
‘লকডাউন’ চলাকালীন গত মাসে মদ বিক্রির উপরে নিয়ন্ত্রণ আংশিক শিথিল করেছিল রাজ্য। তার পরেই দেখা যায়, মদের দোকানের সামনে উপচে পড়ছে ভিড়। কিন্তু দ্রুত উধাও হয়ে গিয়েছে সেই ছবি। মদ বিক্রিতে ফের এসেছে ভাটার টান। বাঁকুড়ার চিত্র অন্তত সে কথাই বলছে।
এখন কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন মদ বিক্রেতারা। মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। জেলা আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সব চেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে বিয়ার বিক্রি। তার পরে রয়েছে দেশি ও বিলিতি মদ। তথ্য বলছে, গত বছর মে মাসে জেলায় দেশি মদ বিক্রি হয়েছিল ১৪ লক্ষ ৫ হাজার লিটার। এ বছর মে মাসে দেশি মদ বিক্রি হয়েছে ৭ লক্ষ লিটার। অর্থাৎ, বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।
গত বছর মে মাসে জেলায় বিলিতি মদ বিক্রি হয়েছিল ২ লক্ষ ১৫ হাজার লিটার। এ বছর মে মাসে তা কমে হয়েছে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার লিটার। প্রায় ২৭ শতাংশ বিক্রি কমেছে। গত বছর মে মাসে জেলায় বিয়ার বিক্রি হয়েছিল ৪১ লক্ষ ৫ হাজার লিটার। এ বার হয়েছে ৫ লক্ষ ২,৫০০ লিটার। অর্থাৎ, প্রায় ৮৯ শতাংশ বিয়ার বিক্রি কমেছে এ বার।
মদ ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, ‘লকডাউন’-এ মানুষের আর্থিক ক্ষতি এবং মদের দাম বৃদ্ধির ফলেই বিক্রি কমছে। যদিও রাজ্য আবগারি দফতরের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, করোনা-পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে মেলামেশা, উৎসব-অনুষ্ঠান কমে যাওয়াই মদ বিক্রি কমার অন্যতম কারণ।
রাজ্য আবগারি দফতরের কমিশনার উমাশঙ্কর এস বলেন, “রাজ্য জুড়েই মদের বিক্রি কিছুটা কমেছে। তবে লকডাউন ওঠার পরে, ধাপে ধাপে বেচা-কেনা বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।”
বাঁকুড়া শহরের কাটজুড়িডাঙা এলাকার মদ ব্যবসায়ী রাজীব ধূয়াঁর কথায়, “যাঁরা আগে প্রতিদিন রাম বা হুইস্কি খেতেন, তাঁরা এখন দেশি মদ কিনছেন। দেশি মদের খদ্দেররা দোকানেই আসছেন না। এখনও বিয়ার বিক্রি তেমন হয়নি। বেশি দামের ব্র্যান্ডেড মদের বিক্রিও সে ভাবে হচ্ছে না।’’ বিষ্ণুপুরের মদ ব্যবসায়ী শঙ্কর চৌধুরীর দাবি, আগে দৈনিক গড়ে ৮০ হাজার টাকার মদ বিক্রি হত। এখন দিনে ৫০ হাজার টাকারও মদ বিক্রি হচ্ছে না।
খাতড়া মহকুমার ব্লকগুলিতে দেশি মদের চাহিদা বরাবরই বেশি। রানিবাঁধের মদ ব্যবসায়ী বিপ্লব মণ্ডল জানান, যাঁরা ছ’শো মিলিলিটারের দিশি মদের বোতল কিনতেন, এখন তাঁরাই ৩৭৫ মিলিলিটারের বোতল কিনছেন। নিয়মিত ক্রেতাদের বড় অংশই দোকানমুখো হচ্ছেন না। তাঁর দাবি, “ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে।”
বাঁকুড়ার নুনগোলা রোডের বাসিন্দা এক মদ্যপায়ী বলেন, “লকডাউন-এ কাজ বন্ধ থাকায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তা ছাড়া, মদের দর এক ঝটকায় অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এখন আর দৈনিক মদ কিনে খাওয়ার সামর্থ নেই।”
জেলার ‘অল এক্সাইজ় লাইসেন্সি ওয়েলফেয়ার সমিতি’র সম্পাদক চন্দ্রনাথ আচার্য বলেন, “লকডাউন-এ মদের দোকান খোলার পরে যে ভাবে ক্রেতারা দোকানে হামলে পড়েছিলেন, তা দেখে মনে আশা জেগেছিল। কিন্তু এখন ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো।”
এই পরিস্থিতিতে জেলায় চোলাইয়ের ব্যবসা বাড়ছে বলে দাবি বিভিন্ন মহলের। তবে আবগারি দফতরের দাবি, চোলাই রুখতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ‘লকডাউন’ চলাকালীন চোলাইয়ের কারবার রুখতে প্রায় ৬৫টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ২২ জনকে। প্রায় তিন হাজার লিটার চোলাই উদ্ধার হয়েছে।
জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেডেন্ট সৌম্য সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘চোলাই রুখতে জেলা জুড়ে আমরা অভিযান আরও বাড়াচ্ছি।”