বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র ভবনে গীতাঞ্জলি প্রদর্শশালা উদ্বোধনে শঙ্খ ঘোষ ফাইল চিত্র
রবীন্দ্র গবেষক থেকে রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষ, নানা পরিচয়ে বিশ্বভারতীর সঙ্গে তাঁর আত্মার সম্পর্ক। জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া সেই শঙ্ঘ ঘোষের প্রয়াণের খবরে আত্মীয় বিচ্ছেদের শূন্যতা শান্তিনিকেতনে।
করোনা সংক্রমণে বুধবার প্রয়াত হন কবি। শঙ্খবাবু দু’দফায় রবীন্দ্রভবনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৮ সাল নাগাদ রবীন্দ্রভবনে এসেছিলেন ব্যক্তিগত গবেষণার কাজে। এর কয়েক বছর পরে রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষের দায়িত্বে আসেন। পেয়েছেন বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ সম্মান দেশিকোত্তম।
এই পদ ও সম্মানের বাইরেও আমৃত্যু বিশ্বভারতীর বেশ কিছু ভাবনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যার মধ্যে কালানুক্রমিক রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশের কাজ গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের বর্তমান অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শঙ্খ ঘোষের জীবনাবসান শুধু মহৎ কবির তিরোধান নয়। এমন সুস্থ রুচি এবং নিবিড় প্রজ্ঞা রবীন্দ্রোত্তর বাংলায় খুব সুলভ ছিল না। এক অনুভবী কবি ও মহান চিন্তকের মহাপ্রস্থান হল।’’
রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে যে কোনও পরামর্শের জন্য শঙ্খবাবুর শরণাপন্ন হতেন রবীন্দ্রভবনের বর্তমান অধ্যক্ষ অমল পাল। তিনি বলছেন, ‘‘জীবন সায়হ্নে যখন তিনি খুবই অসুস্থ, তখনও আমরা তাঁর পরামর্শ পেয়েছি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কলম সক্রিয় ছিল। নিজের হাতে লিখতে না পারলেও কবিতা থেমে থাকেনি। এমন এক সৃষ্টিশীল ও প্রাজ্ঞ মানুষের মৃত্যুতে শান্তিনিকেতন তার আত্মার আত্মীয়কে হারাল।”
বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, “বিশ্বভারতীর কালানুক্রমিক রবীন্দ্র রচনাবলীর বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি শুধরে দিতেন শঙ্খবাবু। সপ্তম খণ্ড দেখে দেওয়ার মাঝেই চলে গেলেন। রবীন্দ্র গবেষকরাও বিশ্বাসযোগ্য অভিভাবককে হারাল।”
শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে এক মধুর স্মৃতির কথা জানিয়েছেন রবীন্দ্রভবনের নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শঙ্খদা যখন গবেষক হিসেবে রবীন্দ্রভবনে আসতেন, তখন অজিতকুমার পোদ্দার রবীন্দ্রভবনের দৃশ্য-শ্রাব্য বিভাগটি বানিয়েছিলেন। অজিতবাবুর কাজকে সম্মান জানিয়ে ওই বিভাগের ভিজিটার্স বুকে শঙ্খদা লেখেন, ‘নিষ্ঠা এবং শ্রদ্ধার, সঙ্গে অজিত পোদ্দার/ বানাতে চান খনি, দৃশ্য এবং ধ্বনির।”