প্রতীকী ছবি
পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরতে শুরু করতেই জেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু, তার মাঝেও এমন কিছু করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে বীরভূমে, যাঁদের কোনও বিদেশ বা ভিন্ রাজ্য যোগ নেই। এই সংক্রমণের উৎস কী, তা জানতেই নাজেহাল স্বাস্থ্য দফতর। শনিবার রাতে দুবরাজপুর পুর-শহর এবং ইলামবাজারে এমন দু’জন করোনা-পজ়িটিভ রোগীর সন্ধান মিলেছে, যাঁদের সংক্রমণের উৎসও বোঝা যাচ্ছে না।
সূত্রের খবর, দুবরাজপুরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে শনিবার রাতে যক্ষ্মা আক্রান্ত যে যুবকের শরীরে কোভিড-১৯ মিলেছে, তিনি ভিন্ রাজ্য বা জেলায় যাননি। বুকে সংক্রমণ, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়েই তাঁর শরীরে করোনা ধরা পড়ে। সেটাকে ঘিরেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। উৎকন্ঠা রয়েছে হাসপাতাল থেকে ওই যুবককে ছেড়ে দেওয়ার তিন দিন পরে রিপোর্ট আসাকে ঘিরেও। বীরভূম
স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি জানিয়েছেন, আক্রান্তকে বোলপুর কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রোগীর সংস্পর্শে থাকা আত্মীয়-পরিজনকে সরকারি নিভৃতবাসে রেখে তাঁদের লালারসের নমুনা সংগৃহীত হয়েছে।
অন্য দিকে, ইলামবাজারের বছর পঞ্চাশের যে ব্যক্তির শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তিনি ওষুধ ব্যবসায়ী। তিনি লকডাউনের আগে থেকে বাইরে কোথাও যাননি। তাঁর শরীরে করোনার কোনও উপসর্গও তেমন ভাবে লক্ষ্য করা যায়নি। ৯ জুন ওই ব্যক্তি নিজেই ইলামবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিজে গিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য লালারসের নমুনা দেন। শনিবার রাতে রিপোর্ট করোনা পজ়িটিভ আসে। রবিবার সকালে ওই ব্যক্তিকে বোলপুর কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর সংস্পর্শে আসা পরিবারের লোক- সহ ৭ জনকে হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার বাসিন্দারা ভীত। প্রশাসনের তরফ থেকে এ দিন ওই এলাকাটিকে ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
স্বাস্থ্য দফতরের চিন্তা বাড়িয়েছে এই দু’জনের ক্ষেত্রে সংক্রমণের উৎস না জানতে পারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবরাজপুরের করোনা-আক্রান্ত বছর ত্রিশের যুবক কাঠের কাজ করেন। মাস কয়েক আগে তাঁর যক্ষ্মা ধরা পড়ায় শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সোমবার সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তখনই তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেটা শনিবার পজ়িটিভ হয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার রাতেই আক্রান্তের মা, স্ত্রী, দুই শিশুকন্যা, দুই শ্যালক এবং এক আত্মীয়কে এলাকা থেকে সরিয়ে নিভৃতবাসে নিয়ে যায়। সেই সময় একটি শিশুর জ্বর ছিল। ঘটনা জানাজানি হতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পড়শিদের মধ্যে। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, জেলা হাসপাতালেই যেহেতেু টেস্ট হয়েছে, রিপোর্ট না দেখে আগে কেন ছেড়ে দেওয়া হল ওই যুবককে। দাবি ওঠে, এলাকা ও আক্রান্তের বাড়ি স্যানিটাইজ় করতে হবে। স্বাস্থ্য দফতর বলছে, কারও কোভিড উপসর্গ থাকলেই তাঁকে হাসপাতালে রাখতে হবে তার কোনও নির্দেশ নেই। দুবরাজপুরের বিডিও অনিরুদ্ধ রায় বলেন, ‘‘ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবি মেনে রবিবার সকালেই এলাকা স্যানিটাইজ় করা হয়েছে।’’
বোলপুরের সিয়ান-মুলুক পঞ্চায়েতের সিয়ান গ্রামে এক যুবকের শরীরে করোনা সংক্রমণের হদিস মিলেছে। ওই যুবক কয়েক মাস আগে চেন্নাইয়ে কাজে গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়। শনিবার রাতে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে বোলপুর কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।