গণরোষ: রাস্তায় বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের। শনিবার পাড়ুইয়ে। নিজস্ব চিত্র
বিজেপির বিস্তারককে মারধরের অভিযোগ ঘিরে আগে থেকেই তেতেছিল গ্রাম। এ বার ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের হাতের নাগালে পেয়ে পুলিশের সামনেই বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। শনিবার ওই ঘটনাকে ঘিরে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয় সিউড়ি-২ ব্লকের পাড়ুই থানার হাটইকড়া গ্রামে। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে বিজেপির বিস্তারক সনৎ দাসকে মারধর, বাড়ি ভাঙচুর এবং তাঁর অসুস্থ মাকেও মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের অবিনাশপুর অঞ্চলের সভাপতি রাজু মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে এলাকাজুড়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে সেই রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শুক্রবার বিকেলে সনৎবাবুর বাড়ি যান বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল। এরপরেই শ্যামাপদবাবু এবং সনৎ দাস-সহ অন্যান্য বিজেপির নেতা কর্মীরা পাড়ুই থানায় যান এবং ঘটনার প্রতিবাদ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিজেপির অভিযোগ, শনিবার সকালে ওই তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে বাইক বাহিনী হাটইকড়া গ্রামে যায় এবং বিজেপি কর্মীদের হুমকি দেয়। সেই সময় গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে ওই বাইক বাহিনীকে তেড়ে গেলে তারা পালিয়ে যায়। এরপরেই ঘটনার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে পুরন্দরপুর থেকে বোলপুর যাওয়ার রাস্তায় হাটইকড়া সেতুর কাছে পথ অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে ওই অবরোধ। সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ উঠে যায়। কিন্তু সেই সময়ই রাস্তা দিয়ে তিনটি বাইকে করে রাজুবাবু-সহ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী যাচ্ছিলেন। ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বিজেপি কর্মীরা। পুলিশের সামনেই বাঁশ, লাঠি এবং ভারি ধাতব বস্তু দিয়ে রাজুবাবু, তৃণমূলের অবিনাশপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তাপস দাস ও অন্যান্য তৃণমূল কর্মীদের উপর চড়াও হয় ও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আহত হন রাজুবাবু-সহ তাপস দাস এবং পাঁচজন তৃণমূল কর্মী। পরে পুলিশ কোনওক্রমে ওই তৃণমূল নেতা ও তাঁর সঙ্গীদের উদ্ধার করে সুলতানপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করায়। সেখানে তাপসবাবুর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার জেরে এলাকার পরিস্থিতি থমথমে, চলছে পুলিশি টহলদারি। আহত তৃণমূল নেতা তপন দাস বলেন, ‘‘আমরা সিউড়ি থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। সেই সময় হাটইকড়া মোড়ে কয়েকজন বিজেপি কর্মী দাঁড়িয়েছিল। ওরা হঠাৎ মারধর করতে শুরু করে। আমার মাথা ফেটে যায়, আহত হন আমাদের কয়েকজন কর্মী। পুলিশ ছাড়ানোর চেষ্টা করে পারেনি।’’
অন্যদিকে শুক্রবার সকালে ওই গ্রামে বাইক বাহিনী যাওয়ার কথা অস্বীকার করে তৃণমূলের সিউড়ি-২ ব্লকের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। বিজেপি কর্মীরা ওই এলাকা অশান্ত করার চেষ্টা করছে। কী ভাবে অনুমতি ছাড়া বিজেপি কর্মীরা এই অবরোধ করল। পুলিশই বা তাদের উঠিয়ে দিল না কেন? সম্পূর্ণ ঘটনা পুলিশের সামনে হয়েছে। তবে আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ করবো।’’ বিজেপির সিউড়ি-২ ব্লকের সভাপতি পবন বাগদি বলেন, ‘‘এ দিনের ঘটনা পুলিশ এবং তৃণমূলের পরিকল্পনায় হয়েছে। যাদের গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে ওই পথ অবরোধ তারা ওই রাস্তা দিয়ে যায় কোন সাহসে। অবরোধ তো উঠে গিয়েছিল। ওরা ওই রাস্তা দিয়ে এল বলেই তো এই সমস্যার সৃষ্টি হল।’’
তাঁর সংযোজন, ‘‘ওই ঘটনার পরেই তৃণমূলের লোকেরা গ্রামে এসে আবার তাণ্ডব করেছে। এলাকায় বোমাবাজি করেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আমাদের কর্মীদের বাড়ি। এমনকি আমাদের কর্মীদের বাড়িতে বোমা ফেলে দিয়ে পুলিশকে দেখাচ্ছে আর পুলিশ আমাদের কর্মীদের ধরছে। আসলে আমাদের লোকদেরকে মারধরের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’’
তবে বারবার ওই দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, পুলিশ প্রশাসন দ্রুত এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনুক। ঘটনার নিন্দা করে এসইউসিআই-এর নেত্রী আয়েশা খাতুন বলেন, ‘‘ওই দুটি রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষ এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। আর পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে। সাধারণ মানুষের চরম সমস্যা হচ্ছে। কেউ কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতেই পারে। তা বলে এই ধরনের সংঘর্ষ কাম্য নয়।’’