মন্দিরের সামনে বসছে এমন পাথরের ফলক। নিজস্ব চিত্র।
কোথাও চলছে ভিন্ রাজ্যের শিল্পী এনে মন্দির সংরক্ষণের কাজ। কোথাও স্থাপত্যের সঙ্গে পরিচিত করাতে মন্দিরের সামনে বসছে পাথরে খোদাই করা বোর্ড। চলছে ডিজিটাল মাধ্যমেও স্থাপত্যের তথ্য জানার ব্যবস্থা। বাঁকুড়া জেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির ও স্থাপত্য। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সংরক্ষিত প্রায় তিরিশটি স্থাপত্য ছড়িয়ে রয়েছে। সংরক্ষিত বিভিন্ন মন্দিরের বিষয়ে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ।
পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সূত্রে জানা গিয়েছে, নানা স্থাপত্যের সামনে যে পরিচিতিমূলক বোর্ড থাকত, সেগুলি নিয়ে ছিল হরেক সমস্যা। লোহার উপরে লেখা হওয়ার কারণ কয়েক বছর পরে সেগুলি ঠিকমতো বোঝা যেত না বলে অভিযোগ। তা সমাধানেই পাথরের ব্লকে স্থাপত্য-পরিচিতি খোদাই করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাতে এক দিকে যেমন প্রতিষ্ঠাকাল, প্রতিষ্ঠাতা-সহ নানা বিষয়ের তথ্য। কবে থেকে মন্দিরটি দফতরের সংরক্ষণের আওতায় এসেছে, সে তথ্যও থাকবে।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা মণ্ডলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট শুভ মজুমদার জানান, টেরাকোটার অলঙ্করণ সমৃদ্ধ বিষ্ণুপুরের শ্যামরায়, কৃষ্ণরায়, মদনমোহন মন্দিরের প্রতিটি টেরাকোটা ফলক ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষিত হবে। পর্যটকেরা ‘কিউ আর’ কোড স্ক্যান করার মাধ্যমে প্রতিটি ফলক সম্বন্ধে তথ্য পাবেন। সে কাজও চলছে দ্রুততার সঙ্গে। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সূত্রে জানা গিয়েছে, বড় কাজের মধ্যে ডিহরের ষাঁড়েশ্বর মন্দিরের স্থাপত্যগত সংরক্ষণের কাজ চলছে। ষাটের দশক থেকে মন্দিরটিতে ফাটল ধরেছিল। সময়ের সঙ্গে তা বাড়ছিল। এই সমস্যা দূর করতে পাথরের ব্লকগুলি খুলে ফেলে ফের গাঁথা হবে বলে জানা গিয়েছে। সে কাজের জন্য ওড়িশা থেকে শিল্পীরা আসছেন। ওড়িশার পাথরের শিল্পীদের দিয়ে গোকুলনগরের গোকুলচাঁদ মন্দিরের সংস্কারও চলছে জোরকদমে। সদ্য শেষ হয়েছে বহুলাড়ার সিদ্ধেশ্বর মন্দিরের স্থাপত্য-সংস্কার ও বিষ্ণুপুরের রাধাবিনোদ মন্দিরের টেরাকোটা ফলকে রাসায়নিক সংস্কার।
স্থানীয় ইতিহাস গবেষক শুভম মুখোপাধ্যায় জানান, দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক আসেন বাঁকুড়ার প্রাচীন মন্দিরগুলির আকর্ষণে। মল্ল রাজাদের প্রতিষ্ঠিত টেরাকোটা বা পাথরের কাজের নানা মন্দিরের টানেই দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা বছরভর আসেন বিষ্ণুপুরে। তাই মন্দিরগুলির সংরক্ষণ ও সংস্কারের পাশাপাশি, মানুষের সচেতনতাও জরুরি। শুভ মজুমদার বলেন, ‘‘স্থাপত্যের আশপাশে নোংরা না ফেলা, আগুন না জ্বালানো— এ সব বিষয়ে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।’’
বাঁকুড়ায় অসংরক্ষিত মন্দিরের সংখ্যাও প্রচুর। বড়জোড়ার গোবিন্দপুর গ্রামে প্রাচীন হনুমান মন্দির, দ্বারকেশ্বরের তীরে জামবনির বাদা অঞ্চলে প্রাচীন কনকলতা মন্দির, পাত্রসায়রের হাটকৃষ্ণনগর গ্রামে মল্লরাজ বীরসিংহ প্রতিষ্ঠিত কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরের মতো আরও নানা মন্দির সংরক্ষণের আওতায় আসা প্রয়োজন, ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসে’ এমনই দাবি বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দাদের অনেকের।