আঁচ: পুরুলিয়া সার্কিট হাউসে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে। ততই কাঁপুনি ধরছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াবাসীর। ক’দিন ধরেই ভোরের পারদ বেশ নেমে গিয়েছে। তারপরে ক’দিন ধরে সেই একই জায়গার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। সেই সঙ্গে মরসুমের শীতলতম দিনের রেকর্ড গড়ছে আর ভাঙছে।
রবিবারই বাঁকুড়ার পারদ নেমে গিয়ে এই জেলায় মরসুমের শীতলতম দিনের রেকর্ড তৈরি করল। জেলার আবহাওয়া কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জেলার তাপমাত্রা নেমেছিল ৯.৬ ডিগ্রিতে। শনিবার বাঁকুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নামে ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার তা আরও নেমে দাঁড়ায় ৮.৪ ডিগ্রিতে।
পুরুলিয়াতে অবশ্য বাঁকুড়াকে কবেই টেক্কা দিয়েছে। বুধবার থেকে নামতে শুরু করে এখানকার তাপমাত্রা। সে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরের দিন তা হয় ৬.৬ ডিগ্রি। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ আরও নেমে গিয়ে দাঁড়ায় ৬.৪ ডিগ্রিতে। শনিবারই ছিল চলতি মরসুমের শীতলতম দিন। সে দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছয় ৬ ডিগ্রিতে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা উঠে হয় ৬.১ ডিগ্রি। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘একটি কর্মসূচিতে রবিবার বরাবাজারে গিয়েছিলাম। দুপুরের সময়ে ততটা কনকনে শীত অনুভূত না হলেও, যেই সূর্য ডুবে গেল, তারপরেই হাড়ে যেন কাঁপুনি লেগে গেল।’’ একটি ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় কলকাতা থেকে পুরুলিয়ায় আসা সুপ্রতীম মিত্র বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার ঠান্ডা নিয়ে শুনেছি। এসে তা মালুম হল।’’
তবে হাড় কাঁপানো শীতেও ছুটির দিনে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে অবশ্য উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছে। অযোধ্যা পাহাড়, গড়পঞ্চকোট, জয়চণ্ডী পাহাড়, বড়ন্তি-সহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে বহু মানুষ এসেছিলেন। এ দিন শুশুনিয়া, মুকুটমণিপুরের মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলিতেও বহু মানুষ এসেছিলেন। বাঁকুড়ায় দ্বারকেশ্বর নদের চর ঘেঁষে বিভিন্ন জায়গায় দল বেঁধে পিকনিক করতে আসা মানুষের ঢল দেখা গিয়েছে এ দিন। রাজগ্রাম সেতু-সহ দ্বারকেশ্বর নদের চরে লোকজনের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানে সপরিবারে পিকনিকে গিয়েছিলেন পোয়াবাগানের বাসিন্দা গৌতম দত্ত। তিনি বলেন, “কনকনে ঠান্ডায় রোদে শরীর সেঁকতে সেঁকতে পিকনিক করে খুব আনন্দ হয়েছে।’’ নদীর পাড়ে রোদে বসে গল্পে মেতেছিলেন পিকনিকে আসা বধূ কল্পনা কর্মকার, দুলালি কর্মকারেরা। তাঁরা বলেন, “গ্রামের কয়েকটি পরিবার মিলে পিকনিকে এসেছি। ঠান্ডাটা পড়ে মজাটা ষোলো আনা হয়ে গিয়েছে।’’
পুরুলিয়া জেলার হোটেল-লজ মালিকদের সংগঠনের মুখপাত্র মোহিত লাটা বলেন, ‘‘শীত যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যাও। এমনই অবস্থা হোটেলগুলিতে নতুন করে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না।’’
বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ডিসেম্বর মাসে শীত তেমন পড়লই না। তবে জানুয়ারিতে কাঁপতে কাঁপতে শীত জানান দিচ্ছে, সে এসেছে। তবে ক’দিন স্থায়ী হয়, সেটাই প্রশ্ন।’’