তিলপাড়া জলাধারে বসানো হচ্ছে যন্ত্র। বুধবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁধ থেকে কী পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে, জলাধারে জলের স্তর কী অবস্থায় বা বিপুল পরিমাণ জলকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে বন্টন করতে ঠিক কী করণীয়, এ বার সিউড়ির তিলপাড়া জলাধারের সে সব যাবতীয় তথ্য তুলে ধরবে প্রযুক্তি। আর জলাধারে গিয়ে নয়, কন্ট্রোল রুমে বসেই তার প্রেক্ষিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা যাবে।
চলতি বছরেই ময়ূরাক্ষী নদের উপর থাকা ওই জলাধারে চালু হতে চলেছে অত্যাধুনিক মানের স্কাডা পদ্ধতি। স্কাডা-র পোশাকি নাম ‘সুপারভাইজারি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা অ্যাকুইজিশন।’ সেই কাজ শেষ হলে আধুনিক এই পদ্ধতিতে বন্যা ও সেচের জল নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সুচারু ভাবে করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন সেচ দফতরের আধিকারিেকরা। মাস কয়েক হল কাজ শুরু হয়েছে। কাজের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে সেচ দফতরের ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল উইং। বেশ কিছুটা কাজ এগিয়েছে। নানা উন্নত যন্ত্রপাতি বসেছে। তবে এই বর্ষায় আগে কাজ শেষ হবে এমন সম্ভাবনা নেই বলেই সেচ দফতর সূত্রে খবর।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরাক্ষী নদীর উপর গড়ে উঠা ঝাড়খণ্ডের মশানজোড় বাঁধ থেকে ছাড়া জল কৃষিকাজে লাগাতে ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে নদীর গতিপথেই ১৯৫১ সালে তৈরি হয় তিলপাড়া জলাধার ও সেতু। ৩০৯ মিটার লম্বা ও ৩০ ফিট চওড়া ওই জলাধার থেকে নির্গত সেচখালের মাধ্যমে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সেচের জল বন্টন করা হয়ে থাকে। এর বাইরে বাঁধ থেকে আসা বিপুল জলরাশি বর্ষায় কখন কতটা পরিমাণ ছাড়তে হবে কটি গেট খুলতে হবে তার সব দায়িত্বেই সেচ দফতরের করত ঘটনাস্থলে গিয়ে। বাঁধ থেকে কত জল ছাড়া হচ্ছে, জল বিপদ সীমা ছুঁয়ে গেল কি না, কত হাজার কিউসেক জল ছাড়তে হবে, জলের উচ্চতা বাড়িয়ে সেচের জন্য কত পরিমাণ জল ছাড়া হবে— এ সব তথ্য পেতে ফোন অথবা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের উপর নির্ভর করতেন কর্মীরা। সঙ্গে কর্মীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ থাকত। এ বার একমাত্র সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া সেই কাজে সহায়তা করবে প্রযুক্তি।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট তথ্য জোগাবে ‘স্কাডা’। দৈনিক নিরীক্ষণ ও জরিপ করা হবে প্রাপ্ত তথ্যগুলি। মশানজোড় থেকে থেকে কত জল ছাড়া হল সেই তথ্যও মিলবে তাৎক্ষণিক। রাডারের মাধ্যমে। জল ছাড়তে কতটা গেট তুলতে হবে তাও জানাবে ‘স্কাডা’। এর জন্যে প্রতিটি গেটে বসানো হবে পৃথক সেন্সর। কন্ট্রোল রুমে একটি ডিসপ্লে বোর্ডের সামনে বসেই মনিটরিং করা যাবে জল ছাড়ার পরিমাণ, কতগুলো গেট থেকে জল ছাড়া হচ্ছে, মাঝপথে বৃষ্টির পরিমাণ সবই। দফতর সূত্রে খবর চলতি বছরেই মশানজোড় জলাধারের নিয়ন্ত্রণের স্কাডা পদ্ধতি চালু হয়েছে। জল সম্পদ ভবন থেকেই যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এ বার তার সঙ্গে তিলপাড়া জলাধার যুক্ত হলে পুরো ব্যবস্থা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাবে। তাতে ক্ষয়ক্ষতি আটকানো যাবে বলে জানাচ্ছেন দফতরের আধিকারিকেরা।