শিক্ষক দিবসে পুরুলিয়ার ‘অন্য রকম’ দুই শিক্ষক

অবসরের পরেও কলেজে

নিরঞ্জনবাবুর আদি বাড়ি বাঁকুড়ার কোতুলপুরের লেগো গ্রামে। এখন রঘুনাথপুরের বাসিন্দা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১৯৭৩ সালে শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন রঘুনাথপুর কলেজে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০১
Share:

নিরলস: রঘুনাথপুর কলেজের রসায়ন বিভাগের পরীক্ষাগারে নিরঞ্জন কোলে। ছবি: সঙ্গীত নাগ

কলেজ থেকে অবসর নিয়েছেন ১১ বছর আগে। কিন্তু ভুলতে পারেননি কলেজ এবং পড়ুয়াদের। এখনও প্রত্যেক দিন রঘুনাথপুর কলেজের রসায়ন বিভাগে গেলেই দেখা মেলে অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক নিরঞ্জন কোলের। ছাত্রছাত্রীদের কাছে যিনি ‘এন কে স্যর’ নামে পরিচিত।

Advertisement

নিরঞ্জনবাবুর আদি বাড়ি বাঁকুড়ার কোতুলপুরের লেগো গ্রামে। এখন রঘুনাথপুরের বাসিন্দা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১৯৭৩ সালে শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন রঘুনাথপুর কলেজে। সাড়ে তিন দশক এই কলেজে শিক্ষকতা করার পরে, বিভাগীয় প্রধান হয়ে অবসর নেন ২০০৮ সালে। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে শিক্ষকতা চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। নিরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘বরাবরই পড়াতে ভাল লাগে। তাই অনুরোধ ফেরাতে চাইনি।’’ সাম্মানিক হিসাবে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিরঞ্জনবাবুকে ২ হাজার টাকা দেন। কিন্তু তাতে তাঁর প্রবল আপত্তি। নিরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘ওঁরা জোর করেন। ইচ্ছা না থাকলেও বাধ্য হয়ে সাম্মানিক নিতে হয়।’’

অবসর নেওয়ার পরেও টানা ১১ বছর ধরে কলেজে পড়িয়ে চলেছেন নিরঞ্জনবাবু। আগের মতোই নিয়ম মাফিক ক্লাসে রসায়নের জটিল সমীকরণ সহজ করে বুঝিয়ে দেন পড়ুয়াদের। তার পরে ছোটেন ল্যাবরেটরিতে। ইচ্ছা করলেই তো গৃহ শিক্ষকতা করতে পারতেন? ‘এন কে স্যর’-এর উত্তর, ‘‘কলেজে শিক্ষকতা শুরু করার পরে, কোনও দিন প্রাইভেট টিউশন করিনি। ওটা আমার দর্শনের বাইরে।’’ তবে কলেজে কোনও পড়ুয়ার পড়া বুঝতে সমস্যা হলে তাঁকে বাড়িতে ডেকে নেন নিরঞ্জনবাবু। অলক মাহাতো, অভীক মণ্ডলের মতো ছাত্রেরা বলেন, ‘‘এন কে স্যরের ক্লাসের জন্য মুখিয়ে থাকি।”

Advertisement

এ বছর সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে স্নাতক স্তরে প্রথম স্থান পেয়েছেন রঘুনাথপুর কলেজের এক ছাত্র। ১৬ জন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ‘‘এই সাফল্যের কৃতিত্ব অনেকটাই নিরঞ্জনবাবুর’’, বলছেন কলেজের অধ্যক্ষ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘অধ্যক্ষের পদে যোগ দেওয়ার পরে দেখেছিলাম এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রসায়ন বিভাগে নিয়মিত পড়াচ্ছেন। পরে বুঝতে পারি, উনি রসায়ন বিভাগের জন্য কতটা অপরিহার্য। যত দিন উনি সুস্থ থাকবেন, তত দিন আমাদের কলেজে পড়াবেন। এটাই আমরা চাই।”

কী বলছেন নিরঞ্জনবাবুর স্ত্রী রেখাদেবী? তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষকতা এবং পড়ুয়ারাই ওঁর কাছে সব থেকে প্রিয়। ভাল লাগে যখন শুনি, ওঁর ছাত্রেরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে পৌঁছেছেন।’’ সঙ্গে সংযোজন: ‘‘অবসর নেওয়ার পরে বাড়িতে থাকলে উনি মনের খোরাক পেতেন না। পড়াচ্ছেন বলেই তা পাচ্ছেন।’’

সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক সুব্রত দে বলেন, ‘‘রসায়নের জটিল বিষয়গুলি কতটা সরল করে ছাত্রদের সামনে উপস্থাপিত করা যায়, সেটা এন কে স্যরের কাছে না পড়লে বোঝা সম্ভব নয়।” মুম্বইয়ে একটি বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদে কর্মরত রঘুনাথপুর কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রাক্তনী শান্তনু দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘কিছু শিক্ষককে কোনওদিন ভুলতে পারে না ছাত্রেরা। এন কে স্যর হলেন সেই শিক্ষক।” বিভাগের আর এক প্রাক্তনী কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় চেন্নাইয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্যর নিজে হাতে গড়ে তুলেছেন। তাই আমরা প্রতিষ্ঠিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement