Siuri

মোরব্বা হাবের স্বপ্নে প্রত্যাশী ব্যবসায়ী  

যে মিষ্টিকে ঘিরে শহরের মানুষ গর্ববোধ করেন সেই মোরব্বা কিন্তু সিউড়ি শহরের নিজস্ব নয়।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ০১:১৬
Share:

তৈরি হচ্ছে মোরব্বা। নিজস্ব চিত্র।

মিষ্টি, ল্যাংচা, জয়নগরের মোয়ার মতো সিউড়ি’র বিখ্যাত মোরব্বা হাবও তৈরি হতে পারে সরকারি উদ্যোগে!

Advertisement

গত সোমবার বোলপুরের গীতিঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে এমন কথা শোনার পরই রোমঞ্চিত সিউড়ি শহরের তিন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী। মূলত যাঁদের সৌজন্যেই রাজ্যের অন্য বিখ্যাত মিষ্টিগুলির পাশাপাশি কয়েক দশক ধরে সিউড়ি শহরের সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছে মোরব্বার নামও।

সিউড়িতে কিন্তু ভাল মোরব্বা পাওয়া যায়। সেটা শহর, জেলাবাসী তো বটেই এই রাজ্যের বহু বিখ্যাত মানুষ ওয়াকিবহাল। এমনটাই জানালেন সিউড়ি শহরে মোরব্বা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী নন্দদুলাল দে। তিনি বলেন, ‘‘শুধু সাধারণ মানুষ কেন, রাজ্যের মন্ত্রী ,আমলা, জাদুকর, অভিনেতা, খেলোয়াড় থেকে সংস্কৃতি জগতের অনেক স্বনামধন্য ও বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁরা সিউড়ির মোরব্বার স্বাদ চেখে দেখেছেন এবং তৃপ্ত হয়েছেন।’’

Advertisement

তবে যে মিষ্টিকে ঘিরে শহরের মানুষ গর্ববোধ করেন সেই মোরব্বা কিন্তু সিউড়ি শহরের নিজস্ব নয়। ইতিহাস বলছে, বীরভূমের একদা রাজধানী রাজনগরই জেলায় প্রথম মোরব্বার স্বাদ পেয়েছে। মুসলিম রাজাদের শাসনকালে কোনও এক রাজা উত্তর ভারতে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার চালকুমড়োর মোরব্বা খেয়ে এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে সেখান থেকে কারিগর আনিয়ে রাজনগরেই মোরব্বা বানানোর ব্যবস্থা করেন। সেই কারিগদের কেউ কেউ পরে সিউড়ি এসে, কোনও কোনও মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীর কাছে কাজ যোগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই মোরব্বার জনপ্রিয়তা।

ধীরে ধীরে আম, বেল, শতমূল, পেঁপে, ন্যাসপাতি, আপেল, হরিতকি, আমলকি-সহ নানা বর্ণের সুস্বাদু মোরব্বা মন জয় করেছে সকলের।

ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়িতে এসে মোরব্বা নিয়েও গিয়েছেন অনেকেই। সেই তালিকায় রয়েছেন সিনিয়ার ও জুনিয়ার পিসি সরকার, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, লালুপ্রসাদ যাদব, বহু প্রখ্যাত আমলা, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা। মহানায়ক উত্তমকুমারের জন্যও মোরব্বা গিয়েছে সিউড়ি থেকে। সেই তালিকায় যে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীও আছেন বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই সেটা স্পষ্ট করেছিলেন তিনি।

সম্প্রতি রাজ্য ও জেলাপ্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাঝে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সিউড়িতে খুব ভাল মোরব্বা পাওয়ায় যায়।’’ তারপরই মুখ্যসচিবকে উদ্দেশ্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওখানে কিন্তু মোরব্বা হাব হতে পারে আলাপন। আমরা মিষ্টি হাব করেছি, ল্যাংচা হাব করেছি, জয়নগরের মোয়ারও করেছি। মোরব্বারও হতে পারে। তারপরই কৃষি বিপণন দফতরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সচিব রাজেশকুমার সিংহকে মমতা বলেন, “এটা আপনার দফতর। এখানে মোরব্বা হাব হলে বাইরে বিক্রি হতে পারে। এখান থেকে বিশ্ব বাংলার স্টলগুলোকেও দিতে পারেন।”

ভাবনা কবে বাস্তবায়িত হবে সেটা পরের কথা, মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগের কথা জেনেই আনন্দিত সিউড়ির মোরব্বা ব্যবসায়ীরা।

এখন পারিবারিক ব্যবসা সামলান নন্দদুলাল দে’র ছেলে গৌরাঙ্গপ্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে সিউড়ির মোরব্বার কথা শুনলেও সেটা একটা ছোট্ট বাজারে আবদ্ধ। মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো মোরব্বা হাব হলে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছবে।’’ প্রায় একই সুরে সিউড়ির আরেক মোরব্বা ব্যবসায়ী দূর্বাদল মণ্ডল বলেন, ‘‘ভাবনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তবে বর্ধমানে মিষ্টি হাবে আমাদের তৈরি মোরব্বা পাঠিয়ে প্রত্যাশিত সাড়া পাইনি। হাব হলে জায়গা নির্বাচন যেন সঠিক হয়। দূর্বাদলকে সমর্থন করছেন সিউড়ির আরেক মোরব্বা ব্যবসায়ী সুশান্ত সাহা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবরকমের সহযোগিতা করব। তবে হাবের জায়গা নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement