পিছিয়ে গেল বাঁকুড়া পুরসভার বোর্ড গঠনের দিন। যা নিয়ে জল্পনা দানা বেঁধেছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। দিন সাতেক আগেই জেলা প্রশাসন জেলার তিন পুরসভার বোর্ড গঠনের বৈঠক ডাকার দিন স্থির করেছিল। ২৫ মে বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া পুরসভা, ২৬ মে সোনামুখী পুরসভার বোর্ড গঠনের বৈঠক হবে জানিয়ে তিনটি পুরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলরদের চিঠিও দিয়েছিলেন মহকুমাশাসকেরা। শেষ পর্যন্ত বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুরসভায় নির্ধারিত দিনেই বোর্ড গঠন হলেও, বাঁকুড়ার পুরবোর্ড গঠন দু’দিন পিছিয়ে ২৭ মে স্থির করা হয়েছে।
সোমবারই নতুন করে চিঠি দিয়ে বাঁকুড়া পুরসভার কাউন্সিলরদের দিন পরিবর্তনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তার পরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। কেন দিন বদল করা হল, জানতে চাওয়া হলে অভিজিৎবাবু বলেন, “একই দিনে দু’টি পুরসভায় বোর্ড গঠন করতে রাজি নই আমরা। জেলাশাসকের নির্দেশে তাই বাঁকুড়ার পুরবোর্ড গঠনের দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, ৪ জুনের মধ্যে যে কোনও দিন বোর্ড গড়ার নির্দেশ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন বৈঠক পিছিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই পারে।
জেলা প্রশাসন যাই বলুক, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার শাসক দলের অন্দরেই নানা জল্পনা চলছে বোর্ড গঠনের দিন পিছিয়ে দেওয়াকে ঘিরে। ঘটনা হল, বাঁকুড়ার পুরপ্রধান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে জেলা তৃণমূলে। যা চিন্তায় ফেলেছে রাজ্য নেতাদেরও। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রেও বিদায়ী পুরপ্রধান শম্পা দরিপার সঙ্গে বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদারের বিবাদ ছায়া ফেলেছে। শম্পাদেবীর বিরুদ্ধে রয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশ। তাঁদের পিছনে আবার রয়েছে জেলা তৃণমূলের একটি অংশ। দল সূত্রেই খবর, শম্পাদেবীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর তরফে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ অগ্রবালের নাম প্রস্তাব করা হচ্ছে পুরপ্রধান হিসাবে। কলকাতায় গিয়ে রাজ্য নেতাদেরও এ কথা জানিয়ে এসেছেন তাঁরা।
অন্য দিকে, শম্পাদেবীও তাঁর অনুগামীদের নিয়ে একাধিকবার কলকাতায় ছুটে গিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে। কয়েক সপ্তাহ আগে কলকাতার নজরুল মঞ্চে আয়োজিত তৃণমূল কাউন্সিলরদের একটি সভায় নাম না করে শম্পাদেবীকে মৃদু বকুনিও দেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শম্পাদেবীর কিছু অনুগামী জানালেন, ‘দিদি’ চটে গিয়েছেন বুঝে তাঁর সম্পর্কে ‘ভুল বার্তা’ দেওয়া হয়েছে বোঝাতে সভা শেষে রাতেই নবান্নের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন শম্পাদেবী। সম্প্রতি জেলা সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনও প্রশাসনিক বৈঠকে শম্পাদেবী ‘বকুনি’ খেয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমনই যে, বাঁকুড়ায় পুর-চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে কোনও পক্ষই এখনও স্বস্তিতে নেই। ইতিমধ্যেই দ্বন্দ্ব মেটাতে বাঁকুড়া পুরসভায় জয়ী তৃণমূল কাউন্সিলরদের কলকাতায় তলব করে রাজ্য নেতারা মুচলেকা লিখিয়েছেন। ‘দল যাঁকে চেয়ারম্যান করবে, তাঁকেই মেনে নেওয়া হবে’ বলে লিখিত ভাবে কাউন্সিলরেরা জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্বকে। কিন্তু, দলেরই একাংশের দাবি, এত কিছুর পরেও স্বস্তিতে নেই শাসক দল। চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা হওয়ার পরে কোনও পক্ষ ফের বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। ঠিক যেমন হয়েছিল, পুরভোটের আগে। টিকিট না পেয়ে একাধিক তৃণমূল নেতা নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন নিজেদের পছন্দের ওয়ার্ডে।
জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, “এই পরিস্থিতিতে রাজ্য স্তরের কারও জেলায় থাকা দরকার। তাই দলের তরফে এই জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীকে বোর্ড গঠনের দিন জেলায় আসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২৭ মে বোর্ড গঠন হলে শুভেন্দু থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন। সেই মোতাবেক দলীয় ভাবে জেলা প্রশাসনের কাছে ওই দিনই বাঁকুড়া পুরসভার বোর্ড গঠনের বৈঠক ডাকার আবেদন জানানো হয়।’’ শুভেন্দু নিজেও বলেন, ‘‘আমি ২৭ তারিখ থাকব। তবে, তার আগে জেলায় গিয়ে বাঁকুড়ার পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধান নির্বাচন সংক্রান্ত একটি বৈঠক করব।’’
পুরপ্রধান কেন হচ্ছেন, তা অবশ্য বলেননি তমলুকের সাংসদ। রহস্য অতএব থেকেই গেল!