ট্রাফিক ও সিভিক কর্মীদের সঙ্গে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েতের মতো পুরসভায় ভোট হবে না। শনিবার বিষ্ণুপুরে তৃণমূলের ডাকা নাগরিক কনভেনশনে এমনই মন্তব্য করলেন দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। এ দিন বিকেলে যদুভট্ট মঞ্চে তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের মতো পুরসভায় ভোট হবে না। এখানে সব দল থাকবে। সব দল নির্বাচনে লড়বে। তাই নেতৃত্বকে পাড়ায় পাড়ায় বৈঠক বেশি করে করতে হবে। বাড়ি বাড়ি উন্নয়নের কথা জানাবেন পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়। বিরোধীরা সুস্থ প্রতিযোগিতা করুক। তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা উন্নয়ন দেখিয়েই ভোট চাইব।’’ তবে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।
২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলার একটা বড় অংশে বিরোধীরা মনোনয়ন করতে পারেননি বলে অভিযোগ। তার মধ্যে বিষ্ণুপুর মহকুমার সর্বত্রই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জয়ী হয়। বাঁকুড়া মহকুমার অল্প কয়েকটি আসনে ভোট হয়েছিল। ভোট দিতে না পারায় বাসিন্দাদের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়েছিল। পরের বছরে লোকসভা ভোটে জেলার দুই কেন্দ্রেই ধরাশায়ী হয় তৃণমূল। তারপরে অবশ্য তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক পাল্টে শুভেন্দুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাই পুরভোটের মুখে সেই বিষ্ণুপুরে এসে শুভেন্দুর পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ টেনে এ দিনের মন্তব্যের মধ্যে অন্য তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা জেলার বাসিন্দা অমিয় পাত্র দাবি করেন, ‘‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা থাকলে পঞ্চায়েতে যাঁরা জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে রয়েছেন, তাঁদের পদত্যাগ করিয়ে নতুন করে ভোট করান। তৃণমূলের এখনকার পরিকল্পনা হল, সমস্ত দলকে ভোটে লড়িয়ে বিরোধী ভোট ভাগ করে ফায়দা তোলা।’’ বিজেপির বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘মানুষ বিনা বাধায় ভোট দিতে পারলে তৃণমূল জেলার তিন শহর থেকে মুছে যাবে।’’
এ দিন নেতা-কর্মীদের আশ্বস্ত করতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি ভোট মাস্টার। তিনটি পুরসভা দিদিকে (তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) উপহার দেব। আমার কথা শুনে চলুন। সাহায্য করুন। আমি সহায়তা করব। তবে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান এ সব চলবে না। আমি আমি নয়, আমরা আমরা করব।’’ ঘটনা হল, গত বিধানসভা ভোটের আগে থেকে লোকসভা ভোট পর্যন্ত বিষ্ণুপুরে দুই নেতার অনুগামীদের দ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্য নেতৃত্ব বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তাঁদের দ্বন্দ্ব মুছতে পারেননি। তবে লোকসভা ভোটের পরে শহরে শ্যামবাবুর বিপক্ষে প্রকাশ্যে তেমন কেউ সরব নয়।
তবে পুরভোটের টিকিট পাওয়া নিয়ে যাতে চাপা থাকা দ্বন্দ্ব ফের না মাথা চাড়া দেয়, সে বিষয়ে কর্মীদের সতর্ক করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘টিকিট নিয়ে শ্যামবাবু তাঁর প্রস্তাব দলকে দেবেন। দল ভাববে। দলের অনেক ‘সিস্টেম’ রয়েছে। সমীক্ষা করে সব কিছু ঠিক করা হবে।’’
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে শ্যামবাবুর পরাজয় প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘মানুষ শ্যামবাবুকে হারিয়ে দেয়। সাংগঠনিক ভুল হয়তো ছিল, শ্যামবাবুর চলার পথেও হয়তো ভুল ছিল। সেগুলি কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। অনেকে নিজের নাক কেটে যাত্রাভঙ্গ করেছিলেন। তাঁরাও পরে ভুল বুঝতে পেরেছেন।’’ পরে শ্যামবাবু বলেন, ‘‘আমার কী ভুল ছিল জানি না। আমি মানুষের সঙ্গে ছিলাম, এখনও আছি। পুরনির্বাচন নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে না। মানুষ আমার সঙ্গে আছে।’’ তিনি জানান, বাড়ি বাড়ি প্রচারের জন্য এ দিনই তিনি দলের কাউন্সিলর ও কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। তাঁরা ঠিক করেছেন, দু’-এক দিনের মধ্যে বাড়ি বাড়ি যাবেন। শ্যামবাবু বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুরে যা যা উন্নয়ন আমরা করেছি, তার তালিকা বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসব।’’