মৃত বিজেপি কর্মীর বাড়িতে শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
বিজেপি কর্মী বঙ্কুবিহারী মাহাতোর খুনের ঘটনায় আগামী সাত দিনের মধ্যে অভিযুক্তেরা গ্রেফতার না হলে সিবিআই দিয়ে তদন্ত করানো হবে। শুক্রবার বাঁকুড়ার খাতড়া থানার দেদুয়া গ্রামে মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পুলিশের উদ্দেশে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি কর্মীকে ‘খুনের’ প্রতিবাদে খাতড়ায় দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেন শুভেন্দু। সেই সঙ্গে তাঁর দলের তরফে মৃতের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্যও তুলে দেন। আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। পাল্টা তাঁকে ‘গরুহারা চাষি’ বলে কটাক্ষ করলেন বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী।
গত মঙ্গলবার বাঁকুড়ার দেদুয়া গ্রামের বাসিন্দা বঙ্কুবিহারীর অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হয়। তিনি বিজেপি কর্মী ছিলেন এবং তৃণমূলের লোকজন তাঁকে খুন করেছেন, এই দাবি তুলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে প্রচারে নামে পদ্মশিবির। মঙ্গলবারই ওই গ্রাম থেকে তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু এই খুনের নেপথ্যে রাজনীতি নয়, পারিবারিক বিবাদকে দায়ী করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতাও এই মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি জানান, বঙ্কুবিহারীর মৃত্যুর সঙ্গে কোনও ভাবেই রাজনৈতিক-যোগ নেই। কিন্তু, বিজেপি তাদের অভিযোগে অনড়। শুক্রবার শুভেন্দু দেদুয়া গ্রামে গিয়ে মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারির দাবিতে খাতড়া পাম্প মোড় থেকে দাসের মোড় পর্যন্ত কর্মীদের নিয়ে মিছিল করেন। সেখানে তৃণমূলকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বঙ্কুবিহারী মাহাতোর অপরাধ ছিল তিনি ২০১৮ সাল থেকে বিজেপি করতেন। তাঁর অপরাধ ছিল লোকসভা নির্বাচনেও নিজের বুথে বিজেপিকে লিড দিয়েছিলেন। সে জন্যই তৃণমূল নেতা উত্তম মাহাতোর নেতৃত্বে বঙ্কুবিহারী মাহাতোকে খুন করা হয়েছে।’’ শুভেন্দু আক্রমণ শানিয়েছেন মমতাকেও। তাঁর কটাক্ষ, তদন্তের আগেই কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনাকে জমি নিয়ে বিবাদ সংক্রান্ত গন্ডগোল বলে মন্তব্য করলেন! বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘‘এই ঘটনার কেস ডায়েরি এখনও আদালতে জমা পড়েনি। তার আগেই মুখ্যমন্ত্রী তদন্তে উপসংহার টেনে জানিয়ে দিলেন যে, এই ঘটনা পারিবারিক বিবাদের জের। মৃতের দুই ছেলে-সহ পরিবারের সকলেই বললেন, রাজনৈতিক আক্রোশেই বঙ্কুবিহারীকে খুন করা হয়েছে। কেস ডায়েরি এবং চার্জশিট জমা পড়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী তদন্তে উপসংহার টেনে দিলে কোনও ঘটনার তদন্ত হয়?’’ শুভেন্দুর প্রশ্ন, কেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা উত্তম মাহাতোকে এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ? তিনি বলেন, ‘‘সাত দিনের মধ্যে ওই অভিযুক্ত গ্রেফতার না হলে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য হাই কোর্টে আবেদন জানানো হবে।’’
মৃতের বাড়িতে দাঁড়িয়ে এই ঘটনার জন্য বাঁকুড়ার নবনির্বাচিত সাংসদ তথা তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীকেও একহাত নেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘মূল অভিযুক্ত ও তৃণমূল সাংসদ অরূপের মোবাইল পরীক্ষা করলে হয়তো দেখা যাবে বঙ্কুবিহারীকে খুন করার জন্য ওই ফোনেই নির্দেশ এসেছিল। দু’জনের মোবাইলই পরীক্ষা করা দরকার।’’
বাঁকুড়ার নবনির্বাচিত সাংসদ তথা তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ শুভেন্দুর এই বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি বলেন, ‘‘সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ২৯টি আসনে হেরেছে বিজেপি। কেন্দ্রের মন্ত্রী সুভাষ সরকার পর্যন্ত হেরেছেন। এই অবস্থায় গরুহারা চাষির মতো শুভেন্দু অধিকারী ভুলভাল বকছেন।’’