ভিড়: মাচানতলায় সূর্যকান্ত মিশ্রের সভায়। নিজস্ব চিত্র।
মূর্তি-বিতর্ক নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলকে কটাক্ষ করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে বামফ্রন্টের প্রচার সভায় যোগ দিতে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ায় আসেন সূর্যকান্ত। এই জেলায় বিরসা মুন্ডার মূর্তি নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে সূর্যকান্ত বলেন, “বিরসা মুন্ডা সম্পর্কে না জেনে তারা চর্চা করছেন কেন, জানি না। ওরা এ সব কবে শিখল?’’
তৃণমূলের বিরসা মুন্ডার মূর্তি তৈরির ঘোষণা নিয়ে সূর্যকান্ত বলেন, “ক্ষমতা থেকে ওরা চলে যাওয়ার পরে ওদের স্ট্যাচু কেউ করবে কি না সেটাই বরং দেখুক।”
গত ৫ নভেম্বর বাঁকুড়ায় দলীয় কর্মসূচিতে আসেন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাঁকুড়া শহর লাগোয়া পোয়াবাগান এলাকায় পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০ এ জাতীয় সড়কের পাশে থাকা আদিবাসী পুরুষের একটি মূর্তিকে বিরসা মুন্ডার দাবি করে সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করে বিজেপি। অনুষ্ঠানের দিন সকালে আদিবাসী সমাজের একাংশ বিজেপি নেতৃত্বকে জানান, ওই মূর্তিটি বিরসা মুন্ডার নয়। তারপরেই তড়িঘড়ি বিরসা মুন্ডার একটি ছবি এনে ওই মূর্তির সামনে রেখে সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা করা হয়।
শাহ জেলা ছাড়তেই পরের দিন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ওই মূর্তি লাগোয়া এলাকা দুধ-গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘শুদ্ধকরণ’ করা হয়। কিছু দিন আগে বাঁকুড়ার বিজেপির সাংসদ সুভাষ সরকারের উপস্থিতিতে গোবর জল ছিটিয়ে ওই মূর্তি ‘শুদ্ধকরণ’ করা হয়। এরপরেই তৃণমূল ঘোষণা করে বাঁকুড়ায় ত্রিশ ফুটের বিরসা মুন্ডার মূর্তি গড়ার কথা। এ দিকে বিরসা মুন্ডার মূর্তি নিয়ে চলতে থাকা রাজনৈতিক তরজার বিরোধিতা করে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে পোস্টার দেয় আদিবাসী সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’।
সূর্যকান্তের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বলেন, “সূর্যকান্তবাবু ও তাঁর দল এখন রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক। তাই তাঁর কথাবার্তায় কিছু আসে যায় না।” বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “সূর্যকান্তবাবুরা এতই যদি জ্ঞানী হন, তা হলে রাজ্যের ক্ষমতা হারালেন কেন?’’
বাঁকুড়া শহরের ডিআইবি মোডের ওই সভা থেকে সূর্যকান্তবাবু জানান, তাঁরা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে থাকা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলিকে একজোট করে লড়াই করতে চান। দলীয় কর্মীদের সূর্যকান্তবাবু বলেন, “কে কোন দল করেন, তা দেখবেন না। প্রতিটি মানুষের কাছে ধর্মঘটের দাবিদাওয়া নিয়ে পৌঁছতে হবে।”
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র দাবি করেন, “আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল হারতে চলেছে। তাই এ রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে মূল লড়াই হবে আমাদেরই।” তা শুনে জেলা তৃণমূল সভাপতির টিপ্পনী, ‘‘এতেই বোঝা যাচ্ছে, লোকসভা ভোটের মতোই বিধানসভাতেও সিপিএম নিজেদের ভোট বিজেপিকে দিতে চলেছে। তবে তৃণমূলকে সরানো যাবে না।’’