গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনায় বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা। নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে ‘অপদেবতা রয়েছে’ এমনই ভ্রান্ত ধারণার বশে গুণিন ডাকতে চাঁদা তুলছিলেন গ্রামবাসীর একাংশ। খবর পেয়ে কুসংস্কার ভাঙতে গ্রামবাসীকে বোঝাতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’-এর পুরুলিয়া জেলা শাখার কর্মীরা। শেষমেশ অনেক চেষ্টায় গ্রামবাসীর একাংশের ভুল ভাঙান তাঁরা। মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর থানার জুড়গুড়িডি গ্রামের ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসখানেক আগে ওই গ্রামের এক বালকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ওই বালকের বাবা ফটিক বাউরি জানান, তাঁরা ছেলে খাটিয়াতে বসে টিভি দেখতে দেখতে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, বালকের মৃত্যু হয়েছে। এর কয়েকদিন পরে গ্রামে রটে যায়, গ্রামে ‘অপদেবতা’ এসেছে। সে কারণেই ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে।
এ দিন ওই গ্রামে যান পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক, পেশায় চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় ও সংগঠনের দুই কর্মী দীনবন্ধু গোস্বামী, প্রবীর সরকার। তাঁরা ওই বালকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। নয়নবাবু বলেন, ‘‘তাঁরা জানান, মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে ছেলেটির জ্বর এসেছিল। জন্ডিসেও ভুগছিল। কিন্তু তাঁরা ডাক্তার দেখাননি। স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। এর সঙ্গে অপদেবতার কোনও সম্পর্ক নেই। ছেলেটির ঠিকমতো চিকিৎসা করানো দরকার ছিল।’’
তিনি জানান, গ্রামে কথা বলে জানা গিয়েছে, অপদেবতা দূর করার জন্য কয়েকজন ঝাড়খণ্ডের এক গুণিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গুণিনের খরচ জোগাতে গ্রামে বাড়ি বাড়ি চাঁদা তোলা চলছিল। তাঁরা গ্রামবাসীকে বোঝান, অপদেবতা বলে কিছু হয় না। রোগ হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা করানো দরকার।তাঁরা যখন গ্রামের মানুষজনকে এ কথা বোঝাচ্ছিলেন, সে সময় বেশ কিছু লোকজন উত্তেজিত অবস্থায় তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বলে অভিযোগ। নয়নবাবু বলেন, ‘‘ধৈর্য ধরে তাঁদের কথা শুনে, তাঁরা যে ভুল ভাবছেন, তা বোঝানো গিয়েছে। গুণিন নিয়ে কিছু মানুষের অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে। আমরা গ্রামে চিকিৎসার শিবির করব। ওই পরিবারটি-সহ বেশ কিছু মানুষকে তা বোঝানো গিয়েছে।’’