পুরুলিয়ায় ফেরা সুদীপকে ঘিরে বিজেপি কর্মীদের উচ্ছ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
অমিত শাহের সভায় কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে রবিবার বিকেলে মেদিনীপুর থেকে ফিরলেন পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়। শহরে গেরুয়া গাঁদার মালা, গেরুয়া আবির ও ব্যান্ডপার্টিতে অভ্যর্থনা পেলেন। আর তাঁকে টিকিট দেওয়া ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ ছিল জানিয়ে সমাজ মাধ্যমে দলের কর্মীদের কাছে ক্ষমা চাইলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। সুদীপের যোগদানের পরে বিজেপির এক নেতার সমাজ মাধ্যমে করা একটি ‘পোস্ট’ নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।
শনিবার শাহের সভার পরে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি অতিথি আবাসে ছিলেন সুদীপ। রবিবার বিকেলে শহরে পৌঁছন। পুরুলিয়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সঙ্কটমোচন মন্দিরের কাছে তাঁকে স্বাগত জানান বেশ কিছু বিজেপি কর্মী। ছিলেন দলের ওবিসি মোর্চার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মাহাতো। মন্দিরে প্রণাম সারার পরে ‘বিজেপি জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে কর্মীদের সঙ্গে দলের জেলা কার্যালযের দিকে রওনা হন সুদীপ।
প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার হেঁটে সন্ধ্যায় যখন জেলা বিজেপি অফিসে পৌঁছন সুদীপ, তখন সেখানে দলের জেলা সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বিবেক রঙ্গা— কেউই ছিলেন না। তাঁরা কিছুক্ষণ আগেই অন্য একটি দলীয় কর্মসূচিতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সুদীপ জেলা সভাপতির জন্য অপেক্ষা করেন। তিনি বলেন, ‘‘দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে কথা বলেই পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করব।’’ জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সুদীপবাবু যে সময়ে এসেছিলেন, তখন আমি অন্য একটি কর্মসূচির জন্য অফিসে ছিলাম না। পরে অফিসেই দেখা হয়েছে। কথাও হয়েছে। এ বারে দলের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। উনিও সে কথাই বলেছেন। কোনও
সমস্যা নেই।’’
শনিবার বিজেপির পুরুলিয়ার সাধারণ সম্পাদক, পুরুলিয়া শহরেরই বাসিন্দা বিবেক রঙ্গা ফেসবুকে একটি ‘পোস্ট’ করেন। যা নিয়ে দলীয় কর্মীদের একাংশের মধ্যে জল্পনা চলছে। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘যারা টিকিট পাওয়ার লোভে বিজেপিতে ঢুকছেন, একটু সাবধান। এমন না হয়ে যায়, এ কূলও গেল আর ও কূলও গেল।’’ পরে বিবেক বলেন, ‘‘দল যে পদ্ধতিতে চলে, সে কথাই আমি লিখেছি। কেউ যদি ভাবেন, বিজেপিতে গিয়েই বিধানসভার টিকিট পেয়ে যাবেন, তা হলে ভুল ভাবছেন। আমরা দলের কর্মী। দলের কাজ করে যেতে হবে। ভোটে টিকিট কে পাবেন, তা দলই ঠিক করবে। আমি শুধু এ টুকুই বোঝাতে চেয়েছি।’’
রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিবেকের ‘পোস্ট’ চল্লিশটিরও বেশি ‘শেয়ার’ হয়েছে। ‘লাইক’ ও মন্তব্য করেছেন দলের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক। বিজেপির শহর মণ্ডলের (উত্তর) সভাপতি সত্যজিৎ অধিকারী বলেন, ‘‘দলে আসতে তো বাধা নেই। দলের আদর্শ মেনে কাজ করলে সবাই স্বাগত।’’ ‘পোস্ট’টির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সুদীপ। তিনি বলেন, ‘‘আমি সবে দলে এসেছি। দলেরর আদর্শ এবং গঠনতন্ত্র মেনে কাজ করে যেতে চাই।’’
এ দিন নেপাল মাহাতোও সুদীপকে নিয়ে ফেসবুকে একটি ‘পোস্ট’ করেছেন। তাঁকে পুরুলিয়ায় টিকিট দেওয়া ভুল পদক্ষেপ ছিল জানিয়ে নেপালবাবু বলেছেন, ‘‘এ জন্য কংগ্রেস কর্মীদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। জেলা কংগ্রেস ঠিক ভাবে মানুষ চিনতে পারেনি। এই ভুল আর হবে না।’’ সুদীপ বলেন, ‘‘যতদিন কংগ্রেসে ছিলাম, দলের নির্দেশ মেনেই কাজ করেছি।’’