—নিজস্ব চিত্র।
ঘরে হঠাৎ হঠাৎ জ্বলে উঠছে আগুন! আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে কখনও কাপড় জামা, আবার কখনও দেওয়ালে টাঙানো দেবদেবীর ছবি! দিনে তিন থেকে চার বার ঘটছে এমন রহস্যময় অগ্নিকাণ্ড। গত পাঁচ দিন ধরে লাগাতার এই ঘটনায় নাওয়া-খাওয়া ভুলে আতঙ্কে কাঁপছে গোটা পরিবার। বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লকের জামবেদিয়া গ্রামের ঘটনা।
বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লকের জামবেদিয়া গ্রামের মাটির দেওয়ালের উপর টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়ি। সেই বাড়িতে থাকেন তপন লোহার এবং তাঁর ভাই সঞ্জয় লোহারের পরিবার। বাড়ির উঠোনেই রয়েছে গোয়াল ঘর। দু’টি পরিবারই কৃষি নির্ভর। নিজেদের সামান্য জমিতে চাষাবাদ করা ছাড়াও অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসাবে কাজ করে কোনও রকমে চলে সংসার। সম্প্রতি এই পরিবারেই দেখা দেয় বিপদ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার প্রথম ওই পরিবারের রান্নাঘরে প্রথম আগুন জ্বলে ওঠে। সেই আগুন নেভানোর পর পরিবারের সকলেই ভেবেছিলেন রান্নার গ্যাস লিক করে কোনও ভাবে আগুন লেগে থাকতে পারে। পরবর্তীতে কখনও ঠাকুরঘরে, কখনও জমা করে রাখা জামাকাপড়ের গাদায়, আবার কখনও গোয়ালঘরে বা কোঠা বাড়ির দোতলায় হঠাৎ হঠাৎ জ্বলে উঠছে আগুন। পরিবারের সদস্য তপন লোহার বলেন, ‘‘যে কোনও সময় আগুন জ্বলে উঠতে পারে, এই আশঙ্কায় সর্বক্ষণ আমরা চোখ-কান খোলা রাখছি। তার মাঝেই কখনও কখনও দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করে জামাকাপড় অথবা দেওয়ালে টাঙানো ফটো থেকে ধোঁয়া বার হচ্ছে। ধোঁওয়া বার হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দপ করে আগুন জ্বলে উঠছে। এখন বাড়ির আগুন নিয়েই আমরা শশব্যস্ত। চাষের কাজকর্ম তো দূরের কথা, বাড়িতে গত কয়েক দিন ধরে রান্নাটুকুও হয়নি।’’
গত পাঁচ দিন ধরে এই ভাবে লাগাতার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় প্রচণ্ড আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে জামবেদিয়া গ্রামের ওই পরিবারটির। পরিবারের অপর সদস্য সঞ্জয় লোহার বলেন, ‘‘দৈনিক তিন থেকে চার বার আগুন লেগে যাচ্ছে। শোয়ার ঘর, ঠাকুরঘর, গোয়ালঘর-সহ সব ঘরেই জিনিসপত্রে আগুন লাগছে। কেন এ ভাবে আগুন লাগছে, বুঝতে পারছি না। আতঙ্কে খাওয়া-দাওয়া, ঘুম সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভরা মরসুমেও চাষের কাজ ছেড়ে বাড়ি আগলে পড়ে আছি। আগুন সময় মতো নজরে আসায় তা নিভিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু কোনও কারণে নজরে না পড়লে গোটা বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। এখন এই আশঙ্কাই আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে।’’
ঘটনার খবর পাওয়ার পর গ্রামে যায় স্থানীয় সিমলাপাল ব্লক প্রশাসন ও খাতড়া দমকল কেন্দ্রের কর্মীরা। তাঁরাও এই আগুন লাগার কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাননি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরাও। খাতড়া বিজ্ঞান কেন্দ্রের সম্পাদক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা খবর পেয়ে খাতড়া ও রানিবাঁধ বিজ্ঞান কেন্দ্রের কর্মীরা যৌথ ভাবে ওই বাড়িতে যাই। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথাও বলি। ফসফিন বা মিথেন জাতীয় গ্যাস উৎপন্ন হলে অনেকসময় এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকে । তবে এ ক্ষেত্রে তেমনটা নয় বলেই আমাদের ধারণা। শর্ট সার্কিট থেকেও আগুন লাগার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। বিষয়টা ভৌতিক বা অলৌকিকও কিছু নয়। আমরা ওই পরিবারকে সে কথা জানিয়ে অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হতে নিষেধ করেছি। এ ক্ষেত্রে যে মুহুর্তে আগুন লাগছে, সেই মুহুর্তের প্রত্যক্ষদর্শী কেউ থাকছে না। তাই কেউ উদ্যেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’