মানবাজার গার্লস হাইস্কুলে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
মেয়েদের কোথায় ভর্তি করবেন, ভর্তি করা হেলেও হস্টেল মিলবে তো? ক’দিন আগেও এমনই দুর্ভাবনায় পড়েছিলেন দিশাহীন হয়ে পড়েছিলেন অভিভাবকেরা। সম্প্রতি ‘শবর খেড়িয়া কল্যাণ সমিতি’-র পক্ষ থেকে কয়েকজন শবর ছাত্রীর পড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে আশঙ্কা করে প্রশাসনের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। এসডিও (মানবাজার) বিষ্ণুব্রত ভট্টাচার্য অবশ্য আশ্বাস দিয়েছিলেন, ওই ছাত্রীদের পড়া বন্ধ হবে না। হস্টেল রয়েছে এমন স্কুলেই তাদের ভর্তি করানো হবে।
সোমবার ওই ছাত্রীদের কয়েকজনকে মানবাজার গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি করানো হয়। বাকিরা অভিভাবকদের নিয়ে গেলে তাদেরও ভর্তি করানো হবে বলে জানানো হয়েছে। স্কুলেরই হস্টেলে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল পরিচালন সভাপতি মনোজ মুখোপাধ্যায়। মানবাজার গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের ভর্তি করতে এগিয়ে আসে।
এসডিও (মানবাজার) বিষ্ণুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ ন’জন জন শবর ছাত্রীকে স্কুল ও হস্টেলের সুবিধা দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করেছেন।’’
বলরামপুর ব্লকের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হস্টেলের ছাত্রীদের রাখার সুবিধা রয়েছে। সম্প্রতি সেই স্কুলের দুই শবর ছাত্রী নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে, আর হস্টেলের সুবিধা মিলবে না জেনে কেন্দায় বাড়ি ফিরে যায়। তারা স্কুলে আর থাকবে না জেনে নিচু ক্লাসের আরও কয়েকজন শবর ছাত্রী, যাদের বাড়ি দক্ষিণ পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামে, তারা বাড়ি ফিরে যায়। সবাই মানবাজার, বোরো, কেন্দা থানা এলাকার বাসিন্দা। ছাত্রীদের পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রশাসনও তৎপর হয়। ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ায় ‘শবর খেড়িয়া কল্যাণ সমিতি’। কিছু দিন আগে ওই ছাত্রীরা এসডিও-র সঙ্গে দেখা করে ওই এলাকার কোনও হস্টেলের সুবিধা থাকা স্কুলে তাদের ভর্তি করানোর আর্জি জানায়। তার পরে মহকুমা প্রশাসন স্কুলের খোঁজ শুরু করে।
‘শবর খেড়িয়া কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক জলধর শবর, কো-অর্ডিনেটর ভীম মাহাতো এ দিন কয়েক জন অভিভাবক ও ছাত্রীদের সাথে মানবাজার গার্লস হাইস্কুলে যান। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শোভা সেনাপতি বলেন, ‘‘মহকুমাশাসকের কথা মতো ন’জন শবর ছাত্রীকে হস্টেলে রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইচ্ছা করলে ওই ছাত্রীরা সবাই একটি আলাদা ঘরে থাকতে পারবে।’’ স্কুল পরিচালন সভাপতির জানান, ওই ছাত্রীদের জন্যে আলাদা টিউশনের ব্যবস্থা এবং নিখরচায় বই, খাতা ও পোশাকের ব্যবস্থা করা হবে। অভিভাবকদের মধ্যে নিরঞ্জন শবর, লক্ষ্মীকান্ত শবর বলেন, ‘‘খরচ দিয়ে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। খুব দুর্ভাবনায় ছিলাম। মানবাজার গার্লস হাইস্কুলের কর্তৃপক্ষ আমাদের দুশ্চিন্তামুক্ত করলেন।’’