কড়িধ্যা যদু রায় হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মহড়া। নিজস্ব চিত্র
জেলার অন্যতম সেরা স্কুলের তালিকায় আগেই জায়গা করে নিয়েছে কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল অ্যান্ড পাবলিক ইন্সটিটিউশন। এবার তার মুকুটে আরও একটি নতুন পালক জুড়ল।
কলকাতার রেড রোডে, এবার ৭৩তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতার বাইরে যে চারটি স্কুল ডাক পেয়েছে সেই তালিকায় রয়েছে সিউড়ির এই স্কুলটিও। রবীন্দ্র নৃত্যে এই স্কুলের বিদ্যালয়ের ৪৫জন ছাত্র-ছাত্রীর যোগ দেওয়ার খবরে খুশি কড়িধ্যার বাসিন্দারাও। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায় ও সহ সভাপতি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘এমন অনুষ্ঠানে ডাক পাওয়া অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমরা নিশ্চিত পড়ুয়ারা স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করবে।’’
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে রাজ্য কলা উৎসবে ভাদু ও ভাঁজো গানের প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে এই স্কুলের পড়ুয়ারাই পুরস্কৃত হয়েছিল। যদিও এবার রেড রোডের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারার সুযোগ পাওয়াটা অনেক বড় ঘটনা বলেই মনে করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে অভিভাবকেরা সকলে।
রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে পাঠানো চিঠি ১৯ জুলাই জেলা স্কুল পরিদর্শকের হাত ঘুরে স্কুলে পৌঁছতেই খুশির বন্যা বয়েছে স্কুলে।
জলপাইগুড়ি বানারহাট বিদ্যামন্দির, বাঁকুড়ার একলব্য মডেল স্কুল, দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুন্দরবন বালিকা বিদ্যালয় ছাড়া শুধুমাত্র যদুরায় স্কুলের নাম রয়েছে কলকাতার বাইরের স্কুলগুলোর মধ্যে।
রবিবারই ৪৫ জন পড়ুয়াকে নিয়ে বাসে করে কলকাতা গিয়েছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। টানা ১৮ দিন কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রশিক্ষণ শেষে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে ১৫ অগস্টের অনুষ্ঠানে যোগ দেবে এই স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা। “আমাদের মতো গ্রামীণ স্কুলের পড়ুয়া, শিক্ষকদের কাছে এটা এক অসাধারণ প্রাপ্তি।” বলছেন, পড়ুয়াদের সঙ্গে কলকাতায় যাওয়া শিক্ষিকা মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায়, বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তাঁদের সংযোজন, “সবচেয়ে বড় বিষয়, যে সব পড়ুয়া অনুষ্ঠান করবে তাদের অধিকাংশই পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে উঠে এসেছে।”
সিউড়ি জেলা সদর থেকে বেশ কিছুটা দূরে গ্রামের দিকে কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল অ্যাণ্ড পাবলিক ইন্সটিটিউশন। কিন্তু সিউড়ি-১ ব্লকের এই স্কুলটি আর পাঁচটা স্কুলের থেকে একেবারেই আলাদা। স্কুলের পড়ুয়াদের দাবি, এলাকাবাসী, পরিচালন সমিতি, শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলের প্রচেষ্টায় এই স্কুল এখন লেখাপড়া থেকে সংস্কৃতি চর্চা সবেতেই সেরা। এলাকার বাসিন্দারাও জানান, স্কুলের পরিকাঠামোর দিক যেমন পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, যথেষ্ট সংখ্যক শৌচাগার, ছাত্রীদের জন্য দুটি স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন ও ডিসপোজাল ইউনিট, সৌর বিদ্যুত, ভেষজ বাগান, পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা, মিড ডে মিলের জন্য পুকুরে মাছ, বাগানে আনাজ চাষ, মাশরুম চাষ-সহ একাধিক কর্মকাণ্ডের আধার এই স্কুল। শিশুমিত্র পুরস্কার পেয়েছে স্কুল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত। একাধিকবার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জেলার হয়ে রাজ্যস্তরে প্রতিনিধিত্বও করেছে স্কুলের পড়ুয়ারা। তারই স্বীকৃতি মিলল স্বাধীনতা অনুষ্ঠানের ডাক পেয়ে। এমনটাই মনে করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র নৃত্যে যোগ দেবে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী রিমন দাস, বৈশাখী ভাণ্ডারী, একাদশ শ্রেণির রিমা হাঁসদা, নবম শ্রেণির ছাত্র পরিমল গোস্বামী, দ্বাদশ শ্রেণির রাজেশ মহন্তরা উচ্ছ্বসিত। তাদের কথায়, ‘‘এত বড় সুযোগ কোনও দিন পাব, স্বাধীনতা দিবসের দিন কলকাতায় গিয়ে অনুষ্ঠান করব, স্বপ্নেও ভাবিনি।’’ স্কুলের এক প্রাক্তন ছাত্রী মৌসুমি মণ্ডল নাচের তালিম দিয়েছেন তাদের।
পড়ুয়াদের মতোই আনন্দিত প্রধান শিক্ষক কল্যাণ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘কয়েক মাস পরেই অবসর নেওয়ার দিন। এটা সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে।’’