school

Purulia: দিনে একশো টাকাই অনেক! গরমের ছুটি বাড়তেই দিনমজুরের কাজে গরিব পড়ুয়ারা

অতিমারির পর পুরোদমে স্কুল খুলেছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে। তার পর তিন মাস যেতে না যেতেই গরমের ছুটিতে আবার স্কুল বন্ধ হল।

Advertisement

সমীরণ পাণ্ডে

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২২ ২১:৫২
Share:

মোটরবাইক সারাইয়ের কাজ করছে হারাধন, প্রেম, দয়ালরা নিজস্ব চিত্র

গরমের ছুটি দীর্ঘায়িত হওয়ায় আরও কিছু দিন বন্ধ থাকবে স্কুল। পড়াশোনাও কার্যত বন্ধ থাকায় বাড়িতে বসে না থেকে অর্থ উপার্জনে লেগে পড়েছে গরিব পরিবারের স্কুল পড়ুয়ারা। বাড়তি আয়ের আশায় কেউ লেগে গিয়েছে মজুরের কাজে। কেউ আবার মোটরবাইক সারাইয়ের কাজে লেগেছে বাবা, মায়ের কথায়। পুরুলিয়ার পাঞ্জনবেরা, ভেলাইডি গ্রামে চোখে পড়ছে এমনই সব ছবি।

Advertisement

বাড়িতে প্রবল অর্থকষ্ট। বাবা দেবু সহিস ছৌ নাচ করেন। কিন্তু সব দিন তো আর কাজ জোটে না। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই বড় ছেলেকে কাজ খুঁজতে বলেছিলেন বাবা, মা। তাঁদের কথাতেই এখন বরাবাজার থানার পাঞ্জনবেরা গ্রামের আদাবনা নগেন্দ্রনাথ হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র হারাধন সহিস মোটরবাইক সারাইয়ের কাজ করছে। হারাধন বলছে, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় কিছু উপার্জন হচ্ছে। আবার কাজও শিখছি।’’

হারাধন যে দোকানে মোটরবাইক সারায়, সেই দোকানেই কাজ করে মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র প্রেম সহিস আর ভেলাইডি গ্রামের দয়াল কর্মকার। দয়াল অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা বিভূতি কর্মকার ডেকরেটর্সের দোকানে কাজ করেন। মা থাকেন বাড়িতেই। গরমের ছুটি বেড়েছে বলেই তারা কাজে লেগেছে জানিয়ে দয়াল বলছে, ‘‘স্কুল তো ছুটি এখন। বাড়িতে বসে কী আর করব! তাই একটা কাজ খুঁজে নিলাম। ঘরে কিছু টাকা আসবে। তবে স্কুল খুলে গেলেই আবার যাব আমরা।’’

Advertisement

বাবাকে সংসারে সাহায্য করতে এখন মনোহারি দোকানে বসে সিন্দরি হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সৌরভ মাহাতো। তাতে দিনে ১০০ টাকা রোজগারও হয়। সৌরভের বাবা রামপদ মাহাতোর চায়ের দোকান। কোনও মতে টেনেটুনে সংসার চলে। সৌরভের কথায়, ‘‘স্কুল বন্ধ। সময় নষ্ট করে কী লাভ! ভাবলাম বাবাকে সাহায্য করি। উপার্জন কমই হয়। দিনে মাত্র ১০০ টাকা। তবে ওই অনেক!’’

অতিমারির পর পুরোদমে স্কুল খুলেছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে। তার পর তিন মাস যেতে না যেতেই গরমের ছুটিতে আবার স্কুল বন্ধ হল। প্রথম দফায় ৪৫ দিন এবং তার পরে আরও ১১ দিন গরমের ছুটি দেওয়ায় স্কুল বন্ধ প্রায় দু’মাস।

অন্য দিকে, আবহাওয়া দফতর বলছে, জ্যৈষ্ঠ শেষে আষাঢ়ের পায়ে পায়ে দক্ষিণবঙ্গেরও দরজায় কড়া নাড়ছে বর্ষা। এই পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ রেখে গরমের ছুটি বাড়ানোর কী দরকার, সেই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

সৌরভের সিন্দরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জ্ঞানেশ মেহতা বলছেন, ‘‘গরম তো ভালই ছিল। কোথাও কোথাও করোনাও হচ্ছিল। তাই সরকার এক রকম বাধ্য হয়েই ছুটি দিয়েছে। তবে এতে পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে। প্রথম ইউনিট টেস্ট নেওয়ার জন্য তৈরি ছিলাম আমরা। কিন্তু স্কুল বন্ধ হওয়ায় তা আর নেওয়া হল না।’’

দয়ালের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমর কিশোর মাহাতো বলেন, ‘‘১০ দিন ছুটি বেড়েছে। তাতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। তবে আর যেন ছুটি না বাড়ানো হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement