স্কুলের পুজোয় অসহিষ্ণুতা, জল নিয়ে বার্তা পড়ুয়াদের

মঙ্গলবার বিকেলে স্কুলে গিয়েই সেটা মালুম হল। প্রতিমা কেনা ছাড়া মণ্ডপ সজ্জা সহ অন্য সব কিছুর দায়িত্বে পড়ুয়ারা। বিকেলে চলছিল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০ ০০:২৬
Share:

পাথরচাপুড়ির স্কুলে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র

এক দিকে ধর্ম আর সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বিভাজন তৈরির চেষ্টা, অসহিষ্ণুতার আবহ। অন্য দিকে, এখনই সচেতন না হলে অদূর ভবিষ্যতে দেশ জুড়ে তীব্র জলকষ্টের আশঙ্কা। স্কুলে আয়োজিত সরস্বতী পুজোয় দেশের এই দুই সঙ্কটকে চিহ্নিত করে বার্তা দিল সিউড়ি ১ ব্লকের পাথরচাপুড়ি এইচবিএমএস স্কুলের পড়ুয়ারা।

Advertisement

এ বার স্কুলের সরস্বতী পুজোয় থিম জল সংরক্ষণ। কী ভাবে আগামী দিনে জলসঙ্কটের হাত থেকে রেহাই মিলতে পারে, কী ভাবে জল সংরক্ষণ করা যায়, তা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে ছড়া, ক্যাপশন লেখা নানা পোস্টার, স্কুল জুড়ে নানা কোলাজ। শিক্ষকদের সহায়তায় সব কাজ নিজেদের হাতে করছে পড়ুয়ারা।

আর সম্প্রীতি? সেটাও পুজো কমিটির দিকে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হবে। পুজোর সভাপতি জায়েজ আলি। সম্পাদক রিয়া খাতুন। সম্পাদক যুগ্মভাবে রাখি কাহার, আসপিয়া খাতুন। পুজো কমিটিতে না থেকেও মণ্ডপসজ্জা থেকে অন্য ব্যবস্থাপনা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে সনম খাতুন, সানিয়া সুলতানা, সন্দীপ দাস, অনুপ বাউড়ির মতো সমস্ত পড়ুয়ারা। সরস্বতী পুজোর আয়োজনই শেষ কথা। পড়ুয়াদের হিন্দু বা মুসলিম পরিচয় সেখানে জরুরি হয়নি।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলে স্কুলে গিয়েই সেটা মালুম হল। প্রতিমা কেনা ছাড়া মণ্ডপ সজ্জা সহ অন্য সব কিছুর দায়িত্বে পড়ুয়ারা। বিকেলে চলছিল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারে স্কুলে ভর্তি হওয়া পঞ্চম শ্রেণি বাদ দিয়ে পুজোর নানা কাজের দায়িত্ব রয়েছে বাকি ক্লাসের পড়ুয়ারা। তবে সক্রিয় বেশি এ বার জানুয়ারিতে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ পড়ুয়ারাই। ‘‘স্যররা পাশে আছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে থিম ভাবনা ফুটিয়ে তোলা, কেমন হবে পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,

পুজোর আয়োজন সব কিছুকে নিঁখুত করতে গত দু’সপ্তাহ ধরে আমরা খাটছি। সঙ্গে খুব আনন্দ করছি’’— বলছে পুজো কমিটির সভাপতি জায়েজ আলি, ছাত্রী সনম খাতুন, সানিয়া সুলতানারা। বুধবার সকলে মিলিত ভাবে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার জন্যও তৈরি আমরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি ১ ব্লকের নগরী গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট পড়ুয়া ৮০০। শিক্ষক, শিক্ষিকার সংখ্যা ১৪ জন। গাছগাছালি ঘেরা স্কুল। চলতি বছরে নির্মল বিদ্যালয়ের সম্মান পেয়েছে স্কুল। তাতে উৎসবের রং লেগেছে। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, আগে সরস্বতী পুজো হত। মাঝে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পরে গত চার বছর ধরে ফের ধুমধাম করে পুজো হচ্ছে। এ বার পঞ্চমবার। সেই জাঁক আরও বেশি। পড়ুয়াদের উদ্বুদ্ধ করা থেকে থিম তৈরির পরিকল্পনার নেপথ্যে রয়েছেন মাস কয়েক আগে স্কুলে যোগ দেওয়া ইংরেজির শিক্ষক সুশান্ত সাহা। তিনি বলছেন, ‘‘আগামী দিনে জল সঙ্কট বড় বিষয় হতে যাচ্ছে। তাই মণ্ডপ সজ্জার বিষয় নির্বাচন জল সংরক্ষণ। ভাবতেই পারিনি এত স্বতঃস্ফূর্ত ও নান্দনিক সাড়া পাব পড়ুয়াদের থেকে।’’ ভূগোলের শিক্ষক অরিজিৎ হাজরা বলছেন, ‘‘পড়ুয়া, অভিভাবক, শিক্ষক সকলের আন্তরিকতায় দিন দিন উৎসব বড় হচ্ছে।’’

বড় ভূমিকা রয়েছে স্কুল পরিচালন সমিতিরও। সমিতির সম্পাদক সামসের আলি খান বলছেন, ‘‘স্কুলের ৮০ শতাংশ পড়ুয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। কিন্তু তাতে স্কুল সরস্বতী পুজো আটকাবে কেন? সব ধর্মকে সম্মান করে সকলের একসাথে এগোনো উচিত। পড়ুয়াদের মধ্যে এই শিক্ষার বীজই বপণ করতে হবে। হিন্দু-মুসলিম পড়ুয়ারা সকলেই পুষ্পাঞ্জলিও দেবে।’’ অভিভাবকেরাও উৎসাহিত। সংখ্যালঘু প্রধান গ্রাম থেকে সম্প্রীতির বার্তাও থাকছে। জল সংরক্ষণ যেহেতু এ বার থিম, তাই বেশ কিছু সুপুরি, নারকেল গাছও লাগানো হবে স্কুল চত্বরে।

প্রধান শিক্ষক সুমন্ত রাহা মাস ছয়েক আগে স্কুলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘স্কুলের পরিবেশ দেখে ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছি। মন ছুঁয়ে গিয়েছে। চাইব আগামী দিনে সরস্বতী পুজো আরও বড় হোক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement