—প্রতীকী চিত্র।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ (এআই) নতুন পাঠ্যক্রম হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ চালু করেছে। কিন্তু পুরুলিয়ায় এ নিয়ে সাড়া দেখাচ্ছে না পড়ুয়ারা। স্কুলগুলির মধ্যেও আগ্রহের অভাব রয়েছে। সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত পুরুলিয়া জেলার মধ্যে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ভরপুরনাথজিউ হাই স্কুলে শুরু হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সায়েন্স। কিন্তু দুই বিষয়ে মোটে দু’জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে। আরও প্রায় ১০টি স্কুল এআই শুরু করতে চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু অনুমোদন মেলেনি।
ভরপুরনাথজিউ হাই স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নন্দদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু মনে হচ্ছে, অভিভাবক মহলে এখনও নতুন বিষয় নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে।”
শিক্ষক মহলের দাবি, নানা ক্ষেত্রে যে ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ শুরু হয়েছে, তাতে এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানে বাড়তি সুযোগ মিলতে পারে। তাহলে কেন পড়ুয়াদের মধ্যে আগ্রহের অভাব? নানা মত উঠে আসছে।
শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশ জানাচ্ছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পাঠ্যক্রম পুরোপুরি বিজ্ঞান নির্ভর। ফলে স্কুলে একাদশে বিজ্ঞান বিভাগ থাকলেই একমাত্র সেই স্কুলে এই বিষয় শুরু করা সম্ভব। কিন্তু জেলাতে শিক্ষকের ঘাটতির কারণে বেশ কিছু স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ কার্যত খুঁড়িয়ে চলছে। তাই নতুন পাঠ্যক্রম শুরুর ঝুঁকি নিয়ে চাইছে না স্কুলগুলি।
পাশাপাশি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পড়ানোর জন্য দক্ষ শিক্ষক ও স্কুলে পরিকাঠামোর অভাবও অন্তরায়। এআই পড়াতে গেলে প্রয়োজন উন্নতমানের কম্পিউটার ল্যাবরেটরি। যা জেলার বহু স্কুলেই নেই। এছাড়াও কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করা দক্ষ শিক্ষক প্রয়োজন। যার ঘাটতি আছে।
প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক অভিষেক মিশ্র বলেন, ‘‘ভবিষ্যতের বিষয় হিসাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চাহিদা যথেষ্ঠ বাড়বে।কিন্তু তা শুরু করতে গেলে শিক্ষক, পরিকাঠামোর যেমন অভাব আছে, তেমনই অভিভাবক মহলে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। অভিভাবকেরা সচেতন হলেই অনেক স্কুল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পাঠ্যক্রমে রাখতে শুরু করবে।”
তবে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সায়েন্সের পাঠ্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানাচ্ছেন ভরপুরনাথজিউ হাই স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নন্দদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, গত শিক্ষাবর্ষেই ওই দুই বিষয়ে পড়ানোর অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন যখন পাওয়া যায় তখন ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই এ বছরে ওই দুই বিষয় শুরু করা হয়েছে। ওই স্কুলে আগে থেকেই কম্পিউটার সায়েন্স ও কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে একাদশের বিজ্ঞান বিভাগে পড়ানো হচ্ছে। ওই দুই বিষয়ে ছাত্রদের ভাল সাড়া পাওয়া গিয়েছিল বলেই এ বারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সায়েন্স পড়ানো শুরু হয়েছে।
কিন্তু নতুন বিষয় শুরুর পরে বাস্তব ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্কুলকে। নন্দদুলাল বলেন, ‘‘আধুনিক মানের কম্পিউটারের অভাব রয়েছে। স্কুলের তহবিলে সেই অর্থ নেই, যাতে সেই মানের কম্পিউটার কিনতে পারি। এছাড়া বাংলা ভাষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বই পাওয়া যাচ্ছে না।’’ দুই বিষয়ে ভর্তি হওয়া দুই ছাত্র সুশান্ত গঁরাই ও রুদ্রকুমার দিগার বলছে, ‘‘ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং বা সফটওয়্যার নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সায়েন্স উচ্চ মাধ্যমিকেই রপ্ত করতে পারলে সুবিধা হবে বুঝেই ভর্তি হয়েছি।” ওই স্কুলে কম্পিউটারের এক শিক্ষক রয়েছেন। তিনি শিক্ষা সংসদ থেকে আয়োজিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুরু করতে আগ্রহী পুরুলিয়া শহরের রাজস্থান বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নিশাকর ঝা বলেন, ‘‘কয়েকজন পড়ুয়া আগ্রহ দেখানোর পরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কম্পিউটার সায়েন্স বিষয় একাদশে শুরু করতে চেয়ে আবেদন করেছি। অনুমোদন আসেনি। পেলে চলতি শিক্ষাবর্ষেই শুরু করব।’’ পুরুলিয়ার ডুড়কু হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস গুহনিয়োগী জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একাদশে শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।