মনোযোগী: পুলিশকাকুদের পাঠশালায়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
পুলিশকাকুদের পাঠশালায় ভিড় জমছে শান্তিনিকেতনে।
কাজের ফাঁকে সেখানে পড়ান শান্তিনিকেতন থানার চার পুলিশকর্মী। তাঁদের দু’জন মহিলা কনস্টেবল, অন্য দু’জনও কনস্টেবল। সেই পাঠশালা চলে শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরী মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে।
‘পুলিশকাকুদের পাঠশালা’ নামেই সেটি। থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে সব পড়ুয়াদের বইখাতা, পেনসিল থেকে শুরু করে পড়াশোনার সব সামগ্রী দেয় থানাই। নিখরচে পড়ান পুলিশকর্মীরা।
থানা সূত্রে খবর, শান্তিনিকেতন এলাকায় দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী কয়েকটি পরিবারের ছেলেমেয়েদের টিউশনি পড়ানোর আর্থিক সামর্থ ছিল না। কয়েকটি পরিবারের ছোটরা উপার্জনের জন্য স্থানীয় চায়ের দোকান, খাবারের দোকানে কাজেও লেগেছিল। সে কথা জানতে পারেন বোলপুরের পূর্বতন এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ। তিনিই সে সমস্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য শান্তিনিকেতন থানা চত্বরে ২০১৫ সালে শুরু করেন ছোটদের পাঠশালা। ১৮ জন পড়ুয়া নিয়ে শুরু হয়। পুলিশকর্মী উত্তমকুমার দে, মৌসুমী ঘোষ, আসুদা খাতুন, মিঠুন কোনাইয়ের উপরে পড়ানোর ভার পড়ে। থানায় কাজের পরে বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করেন তাঁরা। প্রথম দিন থেকে এখনও ওই চার পুলিশকর্মীই পাঠশালাটি চালিয়ে আসছেন।
থানা সূত্রে খবর, এখন সেখানে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপিকা সুমিত্রা খাঁ এবং সুস্মিতা সেন নামে এক জন প্রাক্তন সংবাদকর্মী নিয়মিত বাচ্চাদের পড়ান। সপ্তাহে ছ’দিনই চলে পাঠশালা। ক্লাস হয় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। সেখানে পড়তে যায় প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা। এখন পাঠশালায় পড়ুয়ার সংখ্যা ১০৪ জন। সেখানে সপ্তাহে এক দিন করে আঁকা শেখানো, ক্যারাটে প্রশিক্ষণও চলে।
পাঠশালার পড়ুয়া রিয়া মাড্ডি, দীপ্তি মাহাতো, ফুলটুসি দাস বলে, ‘‘পুলিশকাকুদের জন্যই টিউশন পড়তে পারছি। অনেক কিছু শিখতে পারছি।’’ অভিভাবক সদানন্দ দাস, বিমল মাড্ডির কথায়, ‘‘দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। যেটুকু উপার্জন করি তাতে কোনও রকমে সংসার চলে। সন্তানদের টিউশনি পড়তে পারতাম না। ভাবতেই পারিনি পুলিশকর্মীরা ভাবে সময় দিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াবেন।’’
পাঠশালার শিক্ষক পুলিশকর্মীদের মন্তব্য, ‘‘ওদের পড়াতে পেরে আমরাও খুব খুশি।’’