কলেজে নয়। অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়ায় ফিস জমা করতে এখন ভিড় ব্যাঙ্কেই। পুরুলিয়া শহরে সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।
নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েও পুরুলিয়া জেলায় কলেজে ভর্তির সমস্যা কিছুতেই মিটছে না।
গত দু’বছরের মতো এ বারও জেলার কলেজগুলিতে ভর্তি সমস্যা প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ কলেজগুলিতে প্রথম বর্ষে যা আসন, তার ঢের বেশি উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করেছে। ফলে সকলেই কলেজে ভর্তি হতে চাইলে, আসন-সঙ্কট দেখা দেবে। এ বার জেলায় উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতকার্য ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা (রেগুলার) ১৭,৪৪২। তার মধ্যে ১০,৩৮৪ জন ছাত্র ও ৭,০৫৮ জন ছাত্রী। এ ছাড়া আরও ৩,৬২৪ জন ছাত্রছাত্রী পাশ করেছে। তার মানে মোট ২১,০৬৬ জন এ বারে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে।
গতবার জেলায় উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৭৫.১৯ শতাংশ। এ বারে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭.৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ এ বার গত বছরের থেকে কিছু বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পাশ করেছে। এ দিকে, জেলায় ডিগ্রি কলেজের সংখ্যা গতবারে ছিল ২০টি ডিগ্রি কলেজ (বেসরকারি আনন্দমার্গ কলেজ সহ)। এ বার মানবাজার ২ ব্লকে সরকারি একটি কলেজ চালু হচ্ছে। সব মিলিয়ে কলেজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১টি। কিন্তু বিভিন্ন কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ২১টি কলেজে কলা, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগ মিলিয়ে মোট আসন রয়েছে ১৪,৭২৫টি। অথচ তার থেকে রেগুলার হিসেবে ২,৭১৭ জন বেশি উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করেছে। আর মোট পাশের নিরিখে সিটের ঘাটতি ৬,৩৪১টি।
প্রশ্ন উঠেছে সমস্ত কলেজের সব আসনগুলিতেই ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হলে, ওই বাড়তি ছাত্রছাত্রীর কোথায় জায়গা হবে?
উল্লেখ্য, গতবারেও একই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কলেজে ভর্তি হতে না পেরে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ, জেলাশাসকের কাযার্লয়ের বাইরে অবস্থান, জেলা প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের দাবি-দাওয়া পেশের মতো আন্দোলন চলতে থাকে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শেষে বিভিন্ন কলেজে কিছু সংখ্যক আসন বাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বারেও সেই ছবিরই পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছে শিক্ষার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তিরা। গতবারে ভর্তি হতে না পারা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বেশি সরব হয়েছিল এসইউসি প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন ডিএসও। এই সংগঠনের জেলা সম্পাদক বিকাশরঞ্জন কুমার বলেন, ‘‘সরকার শিক্ষার হার বাড়াতে চাইছে। প্রচুর ছাত্রছাত্রীও পাশ করছে। কিন্তু কিন্তু যে প্রশ্নটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হল যত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পাশ করছে, তাঁরা সকলেই কলেজে জায়গা পাবেন তো? আমরা চাই সকলেই কলেজগুলিতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাক।’’ তাঁর অভিযোগ, সরকার বিভিন্ন খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। কিন্তু কলেজগুলির পরিকাঠামো গড়ার বিষয়টি সে ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে না। ক্লাসঘর, ল্যাবরেটরি থেকে অন্যান্য সমস্যা তো রয়েইছে, উপরন্তু কিছু কলেজে শিক্ষকদের শূন্যপদ বছরের পর বছর ধরে পূরণ করা হচ্ছে না। তাঁর অভিযোগ, এমনও কিছু কলেজ আছে যেখানে হয়তো কোনও বিষয়ের অনার্স চালু রয়েছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিষয়ের স্থায়ী শিক্ষক নেই। এই দিকগুলিতে প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার।
গত বছরে এই জেলায় ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এবিভিপি বিশেষ সাফল্য পেয়েছে। তাদের বক্তব্য, লেখাপড়া করার সুযোগ সব ছাত্রছাত্রীরই পাওয়া উচিত। সংগঠনের জেলা সভাপতি সুরজিৎ লাইয়ের কথায়, ‘‘অনেকেই ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন। তাঁদের পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। সকলে ভর্তি হতে না পারলে আমরা প্রশাসনের কাছে যাব।’’ এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর মাঝি বলেন, ‘‘পুরুলিয়া দরিদ্র জেলা। নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া করতে হয়। এ বারে কিছু বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পাশ করেছে। আমরা আশা করব তাঁরা সকলেই বিভিন্ন কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে।’’ তিনি জানান, ভর্তি প্রক্রিয়া আরও কিছুটা এগোক। যাঁরা ভর্তি হতে পারবেন না তাঁদের নিয়ে এসএফআই প্রশাসনের কাছে যাবে। তারপরেও যদি সমাধান না হয় তবে আন্দোলনে নামা হবে। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘কী ভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্রছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যায় তা সকলেই জানেন। এ বার পাশ করার পরেও যদি তাঁরা কলেজে ভর্তি হতে না পারে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। তাঁদের পক্ষে জেলার বাইরে গিয়ে লেখাপড়া করা সম্ভব নয়। বাড়ির কাছাকাছি কলেজে তাঁদের ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। সকলে ভর্তি হতে না পারলে আমরা আমাদের বিধায়কের (নেপাল মাহাতো) মাধ্যমে বিষয়টি বিধানসভায় জানাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যাব। আর জেলা টিএমসিপি-র সভাপতি নিরঞ্জন মাহাতো বলেন, ‘‘প্রথমে দেখি কতজন ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য আবেদন করছেন। কারণ অনেকেই তো ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তে চলে যান। যদি দেখা যায় তারপরেও ভর্তি হতে পারছে না আমরা আসন বাড়ানোর দাবি তুলব। কেউ পড়তে চেয়ে ভর্তি হতে পারবেন না তা হতে পারে না।’’
সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক পড়ুয়াই বৃত্তিমূলক শিক্ষাতে চলে যায়। এ বার দেখি কতজন শেষ পর্যন্ত ডিগ্রি কলেজে ভর্তির আবেদন করে। তারপর দেখা যাক কলেজগুলোতে কতজনকে জায়গা দেওয়া যায়।’’ তিনি জানান, কলেজের পরিকাঠামোর উপর আসন বাড়ানোর বিষয়টি নির্ভর করে। গতবারে কিছু আসন কলেজগুলির পরিকাঠামো অনুযায়ী বাড়ানো হয়েছিল। এ বার দেখা যাক কী হয়।