প্রতীকী ছবি
এক ছাত্রীর সঙ্গে ‘অশালীন’ আচরণ করায় বৃহস্পতিবার সিমলাপালের এক জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষককে গাছে বেঁধে রেখেছিল স্কুলেরই কয়েকজন ছাত্রী। শুক্রবার স্কুলের ছাত্রীদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতিবাদের এ হেন পন্থা বেছে নেওয়ার পরামর্শ তারা পেয়েছিল অভিভাবকদের থেকে।
এ দিকে, ধৃত শিক্ষক অরুণকুমার সিংহ মহাপাত্রের স্ত্রী দাবি করেন, স্কুলের সহ-শিক্ষকদের একাংশের চক্রান্তের শিকার হয়েছেন তাঁর স্বামী। অরুণবাবু অসুস্থ থাকায় তাঁকে এ দিন আদালতে তোলা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই শিক্ষক এখন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন।
স্কুলের ছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, গত জানুয়ারি থেকে মাঝেমধ্যেই অরুণবাবু তাদের কারও কারও সঙ্গে ‘অভব্য’ আচরণ শুরু করেন। তাঁকে একাধিক বার ‘সতর্ক’ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। বৃহস্পতিবার অষ্টম শ্রেণির প্রথম পিরিয়ড চলাকালীন অরুণবাবুকে শ্রেণিকক্ষ থেকে টেনে বার করে একটি গাছে বেঁধে রাখে কয়েকজন ছাত্রী। পরে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
ওই ঘটনায় স্তম্ভিত জেলা শিক্ষক মহলের একাংশ। শিক্ষকের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগ তুলে আগেও অনেক স্কুলে বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু ছাত্রীরা শিক্ষককে টেনে গাছে বেঁধে রেখেছে, এমন কোনও ঘটনার কথা মনে করতে পারছেন না শিক্ষা মহলের কেউ।
সিমলাপালের ওই স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্রী এ দিন অভিযোগ করে, আগেও ওই শিক্ষক তাদের সঙ্গে ‘অভব্য’ আচরণ করেছিলেন। অষ্টম শ্রেণির একাধিক ছাত্রীর কথায়, ‘‘ক্লাসে ঢুকে এক-আধটু পড়িয়ে ছেলেদের বার করে দিতেন। তারপর ক্লাস রুমের দরজা-জানালা বন্ধ করে কোনও কোনও ছাত্রীকে কাছে ডেকে গান গাইতে বলতেন। অসৎ উদ্দেশ্যে গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তাঁর এই আচরণের কথা আমরা অনেকেই বাড়িতে জানিয়েছিলাম। অনেকের অভিভাবকেরা বলেছিলেন, পরে এমন ঘটলে শিক্ষককে বেঁধে রেখে খবর দিবি।’’
বৃহস্পতিবার ঠিক সেটাই করেছিল ছাত্রীদের একাংশ। এক ছাত্রী বলে, ‘‘আমাদের এক বান্ধবীর সঙ্গে অভব্য আচরণ করায় স্কুলের পাশের একটি বাড়ি থেকে দড়ি এনে হেডস্যরকে আমরা বেঁধে ফেলি। জানুয়ারি থেকে ওঁর অভব্য আচরণ বাড়ছিল। বীতশ্রদ্ধ হয়েই আমরা গাছে বেঁধেছিলাম।’’
পড়ুয়াদের অভিভাবকদের একাংশের দাবি, ছাত্রীদের সঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ‘অশোভন আচরণ’ করেন বলে আগেও অভিযোগ উঠেছিল। তবে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি কেউ। ওই শিক্ষককে গাছে বেঁধে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তাঁরা কিছু বলতে চাননি। অভিভাবকদের কয়েক জনের দাবি, ‘‘মেয়েরা নিজেরাই ওই শিক্ষককে বেঁধে রেখেছিল। খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন ছুটে যায়।’’
এ দিকে অরুণবাবুর স্ত্রীর দাবি, ‘‘আমার স্বামী নির্দোষ। সহশিক্ষকদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর সু-সম্পর্ক নেই। সহশিক্ষকেরা চক্রান্ত করে অভিভাবকদের একাংশকে নিয়ে আমার স্বামীকে কলঙ্কিত করার চক্রান্ত করেছেন।’’
বৃহস্পতিবারের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ অরুণবাবুর সহ-শিক্ষকেরা। তবে অরুণবাবুর সঙ্গে তাঁদের যে ‘দূরত্ব’ ছিল, তা তাঁরা অস্বীকার করেননি।
এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘প্রধান শিক্ষক নিজের মতো চলেন। অনেক বিষয়েই আমাদের সঙ্গে মতপার্থক্য ছিল। উনি বলেন, ‘আমি যেটা বলব, সেটাই ঠিক।’ আমাদের সঙ্গে কথাও বলেন না। যা করতে বলেন, আমরা করে দিই।’’