মায়ের সঙ্গে শগুফতা। নিজস্ব চিত্র
পোলবা-কাণ্ডের রেশ এখনও মেলায়নি। এরই মধ্যে স্কুলে যাওয়ার পথে স্কুলবাসেই অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচল প্রথম শ্রেণির ছাত্রী! বাসের পাটাতন ভেঙে রাস্তায় পড়ে গেল শগুফতা নইম নামে ওই শিশু। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকালে, বীরভূমের মুরারই লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মহেশপুর থানার সোনারপাড়ার কাছে। ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে মুরারই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকেরা।
মহেশপুরের সিবিএসই অনুমোদিত একটি স্কুলে মুরারইয়ের ৫০ জন পডুয়া পড়াশোনা করে। রোজ তারা স্কুলবাসে করে ১২ কিলোমিটার দূরের ওই স্কুলে যাওয়াআসা করে। এ দিন সকালেও শগুফতার বাবা নইম রেজা মেয়েকে স্কুলবাসে চাপিয়ে দেন। মুরারই হাসপাতাল কোয়ার্টারের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক নইম রেজা বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের সোনারপাড়া পেরনোর সময় চলন্ত বাস থেকে শগুফতা পাটাতন ভেঙে নীচে পড়ে যায়। অন্য পডুয়াদের চিৎকারে চালক বাস থামান।’’ স্থানীয় বাসিন্দা ও বাস চালকই ওই ছাত্রীকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করেন। বছর পাঁচেকের ওই ছাত্রীর কপালে, নাকে, মাথায়,হাঁটুতে ও হাতে চোট লেগেছে। ঘটনার পরে চালক বাস ঘুরিয়ে মুরারই হাসপাতালে নিয়ে এসে ছাত্রীর চিকিৎসা করান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, পিছন থেকে কোনও গাড়ি চলে এলে বড়সড় বিপদ ঘটে যেত। খুব জোর বেঁচে গিয়েছে মেয়েটি।
নইম এ দিন বলেন, ‘‘বাসের বাইরের কাঠামো দেখে বুঝতেই পারিনি, ভিতরে এমন হাল হয়ে রয়েছে। স্কুল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। মেয়ে খুব জোর বেঁচে গিয়েছে। মাথায় ও হাতে পায়ে চোট পেয়েছে।’’ তবে থানায় কোনও অভিযোগ করেননি ওই অভিভাবক। স্কুলের অধ্যক্ষকে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছন। নইমের বক্তব্য, ‘‘প্রিন্সিপাল নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন। ওই বাস বদলে দেওয়ার কথাও বলেছেন। তাই আর থানা-পুলিশ করিনি।’’
স্কুলবাসের গায়ে নতুন রঙের প্রলেপ পড়লেও ভিতরের অবস্থা খারাপ। অভিভাবকদের ক্ষোভ, পড়ুয়াদের জীবনের কোনও মূল্যই নেই যেন। ক’দিন আগেই হুগলির পোলবায় এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। তার পরেও স্কুলগুলির হুঁশ ফিরছে না। কখনও পুলকার, কখনও স্কুলবাস— দুর্ঘটনার বহর বেড়েই চলেছে। মুরারইয়ের বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, ঝাড়খণ্ড ও বীরভূম সীমানার প্রাথমিক স্কুলের পঠনপাঠন নিম্নমানের। কোথাও শিক্ষকের সংখ্যা কম। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বহু
বেসরকারি স্কুল গজিয়ে উঠেছে। কিন্তু, স্কুলগুলিতে পডুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভাবা হচ্ছে না। অধিকাংশ স্কুলবাস পুরনো মডেলের। ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না।
যে স্কুলে শগুফতা পড়ে, সেটি অবশ্য বেশ নামী স্কুল। দেশ এবং এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই স্কুলের শাখা রয়েছে। বীরভূমের হেতমপুরেও স্কুলটির শাখা রয়েছে। স্কুলটির মহেশপুর শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের তিনটি বাসই ভাড়ায় নেওয়া। যে বাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে। স্কুলের অধ্যক্ষ এস এন সিংহ বলেন, ‘‘খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়েছিল। শিশুটি সুস্থ আছে। তবে, বাসের এমন অবস্থা আমাদের জানা ছিল না। এ দিনই বাস-সহ চালককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
মুরারইয়ের বাসিন্দা অরূপ দাস, সুরজিৎ ঘোষেরা বলেন, ‘‘অভিভাবকরা ভাল লেখাপড়া শেখানোর জন্য সন্তানকে ওই স্কুলে দিয়েছেন। যাতায়াতের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে মাসে মোটা টাকাও দেওয়া হয়। তার পরেও বাসের অবস্থা কেমন, তার দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ খেয়াল করেন না। প্রশাসনেরই এই বিষয়ে সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’’ বিডিও (মুরারই ১) নিশীথভাস্কর পাল বলেন, ‘‘আমরা নিয়মিত স্কুল যানগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করব।’’