General strike

সচল অনেক ক্ষেত্র, স্তব্ধ কোথাও

বিষ্ণুপুরের রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডেও বেশ কিছু যাত্রী দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে ছোট গাড়িতে রওনা দেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ০৩:২৪
Share:

ভোগান্তি: সীমানা থেকে ঝাড়খণ্ডে ফিরে যাচ্ছে বাস। হেঁটেই বরাবাজারের পথে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

পথঘাট

Advertisement

এ দিন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার রাস্তায় বেসরকারি বাস কার্যত নামেইনি। সরকারি বাসগুলির সঙ্গে অল্প কিছু ছোট গাড়ি ছিল রাস্তায় বেরনো লোকজনের ভরসা। পুরুলিয়া জেলা বাসমালিক সমিতি সূত্রের খবর, গোলমালের আশঙ্কায় অনেক মালিক ধর্মঘটের দিনে রাস্তায় বাস নামাতে চান না। ঝাড়খণ্ডের কাশমার থেকে ফিরছিলেন বরলামপুরের ডাভা গ্রামের কমলাকান্ত গোপ। বরাবাজার সীমানার পরে বাস আসেনি। আড়াই কিলোমিটার হেঁটে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ অন্যদের সঙ্গে তিনি পৌঁছন বরাবাজার বাসস্ট্যান্ডে। কমলাকান্তবাবু বলেন, ‘‘এক ঘণ্টারও বেশি বসে আছি। কী ভাবে বাড়ি যাব বুঝতে পারছি না!’’ সকালে পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসে পুরুলিয়া স্টেশনে নেমেছিলেন কটক-ফেরত আদ্রার আঠারো জন। তাঁদের মধ্যে বিকাশ গুপ্ত বলেন, ‘‘স্ট্যান্ডে কোনও বাস নেই। অপেক্ষা করছি।’’

বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে ছাতনার রূপেশ দেওঘরিয়া ও অলক সেন বলেন, ‘‘প্রায় দু’ঘণ্টা হয়ে গেল বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।’’ বিষ্ণুপুরের রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডেও বেশ কিছু যাত্রী দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে ছোট গাড়িতে রওনা দেন। বাঁকুড়া বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি অঞ্জন মিত্র বলেন, “পথে বেরিয়ে আক্রান্ত হলে কে দায় নেবে? করোনা-পরিস্থিতিতে এমনিতেই রোজগার কমে গিয়েছে। তার উপরে বাড়তি ক্ষতি হলে আরও সমস্যায় পড়বেন বাস মালিকেরা। বাসকর্মীরাও ঝুঁকি নিতে চাননি।”

Advertisement

বাজারহাট

বাঁকড়া শহরের চকবাজারে আনাজ ব্যবসায়ীদের অনেকেই এ দিন আসেননি। পুরসভা সংলগ্ন ও মাচানতলার আনাজ বাজার খোলেনি। শহরের রাস্তার পাশে বসা হকারদেরও দেখা যায়নি। ক্রেতা ছিল কম। শহরের ব্যাঙ্কগুলি বন্ধ ছিল। বাঁকুড়া সদর মহকুমার ছাতনা, শালতোড়া, গঙ্গাজলঘাটি, মেজিয়া ও বড়জোড়া ব্লকের বাজারহাটে ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব দেখা গিয়েছে। খাতড়া শহরে দোকানপাট ও ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। আনাজ বাজারে ব্যবসায়ীরা আসেননি। খাতড়া মহকুমার সিমলাপাল, সারেঙ্গা, রাইপুর, তালড্যাংরাতেও বনধের মিশ্র প্রভাব দেখা গিয়েছে। তবে হিড়বাঁধ ও ইঁদপুরে দোকানপাট খোলা ছিল।

বিষ্ণুপুর শহরের প্রতিটি আনাজ বাজার এবং অধিকাংশ দোকানপাট খোলা ছিল। সকালে ঘণ্টা খানেক কাজ চলার পরে, বৈলাপাড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা ধর্মঘটের সমর্থকেরা বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। পুলিশ যায়। ওই ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার বিজয় কুমার বলেন, “বিক্ষোভের সময়ে ভিতরে থাকা গ্রাহকদের আমরা পরিষেবা দিয়েছি। পরে নিরাপত্তার স্বার্থেই কর্মীরা আর কাজে যোগ দেননি।” প্রায় পনেরো কিলোমিটার উজিয়ে বাঁকুড়ার জয়পুরের শ্যামনগর থেকে পেনশনের টাকা তুলতে এসেছিলেন মুক্তা রায়। তিনি বলেন, ‘‘খুব সমস্যায় পড়লাম।” সোনামুখী শহরে ধর্মঘটের আংশিক প্রভাব পড়েছে। কিছু দোকানপাট বন্ধ ছিল। আনাজ বাজার খোলা থাকলেও ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা ছিল কম।

পুরুলিয়া শহরে সকালে কিছু ছোট দোকান খুললেও বড় দোকান ও আনাজ বাজার বন্ধ ছিল। ঝালদায় বিকেলের পরে, বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি দোকান খুলেছিল। আদ্রা ও রঘুনাথপুরে প্রায় সমস্ত দোকানই খোলা ছিল।

শিল্পক্ষেত্র

বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির মেজিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের আধিকারিকেরা জানান, এ দিন উৎপাদন ছিল স্বাভাবিক। কর্মীদের হাজিরাও ঠিক ছিল। তবে ঠিকা শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম। বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (শিল্প) যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর সরকার বলেন, “বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলের কলকারখানায় কোথাও ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি। বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সর্বত্রই উৎপাদন স্বাভাবিক। সমস্ত ইউনিটই সচল ছিল। কোথাও কর্মীদের বাধাও দেওয়া হয়নি। কর্মী উপস্থিতির হারও স্বাভাবিক ছিল।” যদিও ধর্মঘটের পক্ষে থাকা বিভিন্ন বাম দলের শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, কারখানাগুলিতে এ দিন কর্মী হাজিরা ছিল খুবই কম। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি আবার তা অস্বীকার করেছে।

পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের নিতুড়িয়ায় পারবেলিয়া ও দুবেশ্বরী কয়লাখনিতে সকালের ধর্মঘটের সমর্থকে শ্রমিক সংগঠনগুলি পিকেটিং করে। তবে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয়নি। কয়লখনি সূত্রের দাবি, কর্মীদের হাজিরার ছিল স্বাভাবিক। অন্য দিনের মতোই উৎপাদন হয়েছে। তবে কিছুটা ব্যাহত হয়েছে পণ্য পরিবহণ। নিতুড়িয়া ও সাঁতুড়ির কিছু স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় পিকেটিং চলায় পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক ঢুকতে পারেনি। বেলা বাড়ার পরে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সাঁতুড়ির বড় বেসরকারি সিমেন্ট কারখানাতেও স্বাভাবিক উৎপাদন হয়েছে। বলরামপুর লাক্ষা কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রঞ্জিত মাঝি জানান, উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলেও পণ্য পরিবহণ বন্ধ ছিল। ঝালদার প্লাস্টিক ও বিড়ি কারখানাগুলিতে উৎপাদন ব্যাহত না হলেও কর্মী-হাজিরা ছিল কিছু কম।

পক্ষে-বিপক্ষে

পুরুলিয়ার ঝালদা, বরাবাজার, বান্দোয়ান ও রঘুনাথপুরের ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল হয়েছে। বাঁকুড়া শহর, খাতড়া বাজার, তালড্যাংরায় মিছিল করে বামফ্রন্ট। খাতড়া বাজারে এসইউসি-ও মিছিল করেছে। তালড্যাংরায় তৃণমূল ধর্মঘটের বিরোধিতা করে পাল্টা মিছিল করে। তা ছাড়া, দুই জেলার কোথাও তৃণমূলকে ধর্মঘটের বিরোধিতা করে পথে নামতে দেখা যায়নি। বড়জোড়া চৌমাথা মোড়ে বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বামফ্রন্ট। পুলিশ সরাতে গেলে এক প্রস্ত ধস্তাধস্তি হয়। কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের বড়জোড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুজয় চৌধুরী বলেন, “জোর করে পুলিশ অবরোধ তুলেছে। তবে মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন, সেটা ধর্মঘট সফল করে বুঝিয়ে দিয়েছেন।” বেলার দিকে পুরুলিয়া শহরে রুট মার্চ করেছে পুলিশ। ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিনাকী দত্ত।

বিষ্ণুপুর রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সকাল থেকে বাম কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তা অবরোধে বসেছিলেন। হাসপাতাল থেকে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আটকে পড়েন পুরুলিয়ার কাশীপুরের উত্তম দাস। অসুস্থতার কথা জানিয়ে ছাড়া পান। উত্তমবাবু বলেন, “বাস চলবে না ভেবে মোটরবাইক নিয়ে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে ডায়ালিসিস করাতে এসেছিলাম। আমাকেও আটকে দেওয়া হল। এ ভাবে জোর করে ধর্মঘট সফল করা যায় না।’’

বাঁকুড়ার জয়পুরের গেলিয়া মোড়ে সকাল থেকে বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বামফ্রন্টের বিভিন্ন গণসংগঠনের কর্মীরা। ওই রাজ্য সড়কে কোতুলপুরের নেতাজিমোড়েও অবরোধ হয়। পুলিশ গিয়ে দু’জায়গায় রাস্তা খালি করে।

দুই জেলার পুলিশই জানিয়েছে, এ দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement