ছোটবেলা থেকে অনেকের স্বপ্ন থাকে বিপুল সম্পদ হাতের মুঠোয় পাওয়ার। সেই সম্পদ করায়ত্ত করতে অনেকেই কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে সঁপে দেন। আবার কেউ কেউ উত্তরাধিকার সূত্রেই ধনকুবেরের তালিকায় নাম তুলে ফেলেন। এঁদের মধ্যে কয়েক জনের বয়স খুবই কম। কৃতিত্ব, যোগ্যতা এবং কঠোর পরিশ্রম দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করার পাশাপাশি ধনীশ্রেষ্ঠদের তালিকায় নামও তুলেছেন তাঁরা। কারা রয়েছেন সেই তালিকায়?
তাঁদের বয়সি অন্যেরা যখন স্নাতকোত্তরের বার্ষিক পরীক্ষার তোড়জোড় করছেন বা স্নাতকের ডিগ্রি হাতে নিয়ে সবেমাত্র কাজের জগতে ঢুকেছেন কিংবা জীবনের লক্ষ্যই স্থির করে উঠতে পারেননি, তখন সবেমাত্র আঠেরোর দোরগোড়া পেরিয়েই তাঁরা নজির গড়ে ফেলেছেন। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গোটা বিশ্বকে।
২০২৪ সালে ফোবর্স বিশ্বের সমস্ত ধনকুবেরের যে তালিকা তৈরি করেছিল, তাতে জায়গা করে নিয়েছেন কমবয়সি উদ্যোগপতিরাও। চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কমবয়সিদের সেই তালিকায়।
তালিকার সবচেয়ে উপরে রয়েছেন ক্লেমেন্টে দেল ভেচিও। তিনি কনিষ্ঠতমও বটে। লিওনার্দো দেল ভেচিওর ছয় সন্তানের মধ্যে একজন ক্লেমেন্টে। তাঁর বাবা ছিলেন বিশ্বের বৃহত্তম চশমা সংস্থা লুক্সোটিকার প্রতিষ্ঠাতা। লিওনার্দো এসিলরলুক্সোটিকার চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২২ সালে তিনি মারা যান।
ইটালির বাসিন্দা ক্লেমেন্টের বয়স মাত্র ২০। এই বয়সেই পিতার রেখে যাওয়া সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন রাজৈশ্বর্য। এর পরিমাণ ৫২০ কোটি ডলার। ডেল ভেচিও পরিবারের ইটালীয় চশমা এবং বিলাসবহুল পণ্যশিল্পে জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ব্রাজ়িলের ২০ বছরের তরুণী লিভিয়া ভয়েট। বৈদ্যুতিক মোটর প্রস্তুতকারক ‘ডব্লিউইজি’র মোটা শেয়ার রয়েছে তাঁর হাতে। এই শেয়ার তাঁর আয়ের একটি বড় উৎস। প্রয়াত ধনকুবের এগন জোয়াও দা সিলভা ও জেরাল্ডো ওয়ার্নিংহাউসের সঙ্গে লিভিয়ার দাদা ওয়ার্নার রিকার্ডো ভয়েট ডাব্লিউইজির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
এটি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বের ১০টি দেশে এর কারখানা রয়েছে। ২০২২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ৬০০ কোটি ডলার বা ৫ হাজার ১৯০ কোটি টাকারও বেশি। লিভিয়ার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০৩ কোটি ডলার।
এই তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন উত্তর কোরিয়ার অনলাইন ভিডিয়ো গেম কোম্পানি ‘নিক্সন’-এর প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত কিম জং-জুর মেয়ে কিম জা-ইয়ুন। ২০২২ সালে বাবার মৃত্যুর পর তাঁর সম্পদের মালিক হয়েছেন কিম জাং-ইয়ুন। বাবার ব্যক্তিগত সংস্থা ‘এনএক্সসি’র মোট শেয়ারের ৩৬.৭ শতাংশের মালিকানা পেয়েছেন তিনি। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১০২ কোটি ডলার।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে কেভিনের বাবা তাকে জার্মানির শীর্ষস্থানীয় ওষুধের দোকান ‘ডিএম-ড্রোগারি মার্কট’-এর ৫০ শতাংশ মালিকানা হস্তান্তর করেন। মাত্র ২২ বছর বয়সি কেভিনের ২০২৪ সালের আয় ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ইউরোপ জুড়ে তাঁদের পারিবারিক ব্যবসার চার হাজারের বেশি দোকান আছে। ২০২৪ অর্থবর্ষে এই সংস্থার আয় ছিল ১৭০ কোটি ডলার।
পঞ্চম স্থানে রয়েছেন ২২ বছরের কিম জং-মিন। তিনি কিম জা-ইয়ুনের বোন। তিনিও অনলাইন ভিডিয়ো গেম প্রস্তুতকারক নিক্সনের ৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ১৯৯৪ সালে সংস্থাটি তাঁদের বাবা প্রতিষ্ঠা করেন। নিক্সনের জনপ্রিয় ভিডিয়ো গেম ‘ম্যাপলস্টোরি’ ২০০৩ সালে বাজারে আসে।
লুকা দেল ভেচিও সম্পর্কে ক্লেমেন্টে দেল ভেচিওর দাদা। ২৩ বছর বয়সি এই ধনকুবেরের সম্পত্তির পরিমাণ ক্লেমেন্টের সমপরিমাণ। উত্তরাধিকার সূত্রে বিশ্বের বৃহত্তম চশমা সংস্থা লুক্সোটিকার মালিকানা রয়েছে তাঁর হাতে। ভাইয়ের মতোই সম্পদের অধিকারী হলেও বয়সের কারণে এই তালিকার ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন লুকা।
ফ্রান্সের বাসিন্দা রেমি দাসো এই তালিকার সপ্তম স্থানাধিকারী। ২২ বছরেই এই ধনকুবের অর্জন করেছেন ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ। ২০২১ সালে একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর সম্পদ পান রেমি। ফরাসি সফ্টঅয়্যার কোম্পানি দাসো সিস্টেমিস-এর ২.৫ শতাংশ এবং দাসো অ্যাভিয়েশনের ৪.১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানাই তাঁর সম্পত্তির মূল উৎস।
ডোরা ভয়েট হলেন লিভিয়া ভয়েটের দিদি। বোনের মতো তিনিও তাঁর পরিবারের থেকে তাঁর সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। ২৬ বছর বয়সি ডোরা ২০২০ সালে স্থাপত্যে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তবে ডব্লিউইজি পরিচালনে ডোরা ও লিভিয়ার কারও কোনও ভূমিকা নেই। এই তালিকায় নবম স্থানে রয়েছেন তিনি।
সর্বকনিষ্ঠ ধনকুবেরের তালিকায় যথাক্রমে অষ্টম ও দশম স্থানে রয়েছেন ভারতীয় ধনকুবের পরিবার মিস্ত্রী পরিবারের দুই সদস্য জ়াহান মিস্ত্রী ও ফিরোজ় মিস্ত্রী। জ়াহানের বয়স ২৫ ও ফিরোজ়ের ২৭ বছর। দু’জনেরই জন্ম আয়ারল্যান্ডে। ভারতের বৃহত্তম বিল্ডিং এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম শাপুরজি-পালোনজি গ্রুপের উত্তরাধিকারী।
২০২২ সালে ৫৪ বছর বয়সে ফিরোজ় ও জাহানের বাবা সাইরাস মিস্ত্রী এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন তাঁরা। দু’জনেই আইরিশ নাগরিক হলেও বর্তমানে মুম্বইয়ে থাকেন। দু’জনেই সমপরিমাণ সম্পদের অধিকারী। প্রায় ৫০০ কোটি ডলার সম্পত্তি রয়েছে তাঁদের দু’জনের।