ফাঁকা: বাজার বন্ধ কীর্ণাহারে। বৃহস্পতিবার। ছবি: কল্যাণ আচার্য
লকডাউনের একেবারে প্রথম পর্বের ছবি অবিকল ফিরে এল বৃহস্পতিবার। জেলার তিন মহকুমার প্রধান রাস্তা, বাজার-দোকান সবই বন্ধ ছিল। গণপরিবহণ একেবারেই না চলায় রাস্তা ছিল সুনসান। পথে ছিলেন পুলিশ, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। কাউকে রাস্তায় দেখা গেলেই পুলিশের জেরার সামনে পড়তে হয়েছে। কখনও কথায় বুঝিয়ে আবার কোথাও লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়ে লকডাউন সার্থক করেছে পুলিশ। একটা বড় অংশের মানুষ অবশ্য নিজেরাই সচেতন হয়ে পথে বেরোননি। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানান, লকডাউন উপেক্ষা করে অকারণে রাস্তায় নামায় জেলা থেকে ২২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন থানায় তাঁদের রাখা হবে।
ছিল অন্য ছবিও। মুরারই এলাকায় এক যুবক পুরনো প্রেসক্রিপশন নিয়ে পথে বেরিয়েছিলেন। পুলিশ চালাকি ধরে ফেলে মুচলেকা লেখায়। সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় এক যুবক পুলিশের গাড়ি দেখেই কান ধরে দৌড়তে শুরু করেন। তৃণমূলের কার্যালয়ও বন্ধ করেছে প্রশাসন। নলহাটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গার্লস হাইস্কুলের সামনে ওই কার্যালয়ে দলের কর্মীরা জমায়েত করেছিলেন অভিযোগ। রামপুরহাট মহকুমাশাসক এবং পুলিশ আধিকারিক সকলকে বের করে দিয়ে অফিস বন্ধের নির্দেশ দেন।
জেলাবাসীর অনেকের মনে হয়েছে, এ দিন জেলায় সার্বিক ভাবে যে ছবি দেখা গিয়েছে, প্রথম পর্বের লকডাউনের সময়ও তেমন ছিল না। তখন নানা অজুহাতে মানুষকে ঘর থেকে বেরোতে, দোকান-বাজার করতে দেখা গিয়েছিল। সেই ছবি পাল্টে একেবারে ‘সার্বিক সফল বন্ধ’-এর চিত্র সামনে আসায় আশ্বস্ত এঁদের অনেকে। বেসরকারি বাস, ট্রাক থেকে শুরু করে টোটো, অটো, ছোট গাড়ি কোনও কিছুই এ দিন রাস্তায় দেখা যায়নি। লকডাউন উপেক্ষা করে বোলপুরে যাঁরা দোকান খোলার চেষ্টা করেছিলেন, পুলিশ প্রশাসনে তরফে সেগুলি তখনই বন্ধ করে দেওয়া হয়। রামপুরহাটের হাটতলায় অযথা ভিড় জমানো মানুষদের সাইকেলের চাকার হওয়া খুলে দেয় পুলিশ। এ সবের দোসর ছিল ধরপাকড়।
জেলা সদর সিউড়ি শহরের সমস্ত বাজারহাট বন্ধ ছিল। রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনমানব শূন্য। এ দিন সকাল থেকেই সিউড়ি শহরের রাস্তায় দেখা গিয়েছে জেলা পুলিশের কর্তাব্যক্তিদের। সিউড়ির বাসস্ট্যান্ড সহ একাধিক জায়গায় পুলিশের পক্ষ থেকে নাকা চেকিং করা হয়। শহরের অলিগলিতে নজর রাখতে পুলিশের বাইক বাহিনী শহরজুড়ে তল্লাশি চালায়। কোথাও কোথাও মাস্ক না পরায় মৃদু লাঠিচার্জও করা হয়। লকডাউন থাকার সুযোগে ফাঁকা রাস্তায় সিউড়ি পুরসভার তরফে স্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। রামপুরহাট শহরের চারটি বাজার সহ দোকানপাট সমস্ত কিছুই বন্ধ ছিল।
সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাটের পাশাপাশি দুবরাজপুর শহরেও লকডাউন কার্যকর করতে নজরদারি চলে। দুবরাজপুর শহরেও বাজার-দোকান বন্ধ ছিল। একই ছবি দেখা গিয়েছে নলহাটি, মুরারইয়েও। মহম্মদবাজারে কিছু ওষুধের দোকান ছাড়া বাকি সমস্ত দোকান বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল প্যাটেলনগরের আনাজ বাজার। পুলিশ, প্রশাসনের তরফ থেকে মাইক লাগিয়ে বাড়ি থেকে না বেরোনোর প্রচার চলেছে দিনভর।