Athlete

Durga Puja 2021: ‘থামিস না তোরা’, বলছে দৌড়বাজ গীতা

লম্বা দৌড়ে গত বছর গীতা যখন প্রথম বার রাজ্য সেরা হয়েছিল, প্রতিযোগিতায় নামার আগে তাকে উপযুক্ত জুতো কিনে দেওয়ার ক্ষমতাও ছিল না পরিবারের।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১ ০৭:১৪
Share:

গীতা মাহাতো। নিজস্ব চিত্র।

‘ফাইট’...। ‘খিদ্দা’ নয়, নিজেরাই একে অন্যকে এ কথাটা বলে ওরা। পুরুলিয়ার রায়বাঘিনির বিরাট মাঠে এক পাক দৌড়েই কেউ থেমে গেলে সঙ্গীরা সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে— ‘‘থামবি না।’’ ওরা জানে, থেমে যাওয়া মানে নিজেকেই ফাঁকি দেওয়া। কৈশোরেই জীবনের এই সত্য নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছে পুরুলিয়ার মাহালিতোড়ার ছিপছিপে মেয়ে গীতা মাহাতো। পরিশ্রমের জোরেই টানা দু’বার অনূর্ধ্ব ১৬ ‘স্টেট ক্রস কান্ট্রি চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর সেরার শিরোপা পেয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার খিদে তৈরি হয়েছে পুরুলিয়া ১ ব্লকের লাগদা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী গীতার মধ্যে। তাকে দেখেই এগিয়ে এসেছে এলাকার অনেক মেয়ে।

Advertisement

লম্বা দৌড়ে গত বছর গীতা যখন প্রথম বার রাজ্য সেরা হয়েছিল, প্রতিযোগিতায় নামার আগে তাকে উপযুক্ত জুতো কিনে দেওয়ার ক্ষমতাও ছিল না পরিবারের। জুতো কিনে দেন গীতার স্কুল শিক্ষক তথা মানভূম ক্রীড়া সংস্থার অ্যাথলেটিক্স বিভাগের সম্পাদক গৌতম চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলের স্পোর্টস মিটে গীতার মধ্যে আত্মবিশ্বাস দেখেই ভরসা হয়েছিল। স্টেট ক্রস কান্ট্রির জন্য ওকে প্রস্তুত হতে বলি। গত বছর এই প্রতিযোগিতায় কলকাতায় প্রথম বার নেমেই ও সোনা পায়। এ বারের প্রতিযোগিতা সম্প্রতি মেদিনীপুরে হয়েছে। সেখানেও সেরা হয়েছে গীতা।’’

গীতার কথায়, ‘‘প্রথম বার প্রতিযোগিতায় নামার আগে স্যরেরা বলেছিলেন, অনুশীলনে যে ভাবে দৌড়ই, সেটাই যেন ধরে রাখি। প্রথম হব কি না এক বারও মাথায় আসেনি। আমার সঙ্গীদেরও বলি, লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সাফল্য আসবেই। অনুশীলনে কোনও ঢিলেমি নয়।’’

Advertisement

গীতাকে দেখেই গত কয়েক বছরে রায়বাঘিনির মাঠে সূর্যোদয়ের আগেই দৌড়তে চলে আসছে রূপালি, সীমা, পূজা, রেণুকা, পুষ্পর মতো এক ঝাঁক কিশোরী। সে কথাই শোনাচ্ছিলেন গ্রামের ‘ফুনুছবি’ ক্লাবের ম্যানেজার ভক্তপ্রহ্লাদ মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘গীতার সঙ্গে গোড়ায় যে গুটিকয় মেয়েরা অনুশীলন করত, তাদের মধ্যে অঙ্কিতা মাহাতো ও রুম্পা রাজোয়াড় রাজ্য স্কুল ফুটবলে জেলা দলের প্রতিনিধিত্ব করেছে। গীতাও সাফল্য পাচ্ছে। ওদের দেখে এখন শুধু মাহালিতোড়াই নয়, লাগোয়া বিভিন্ন গ্রাম থেকে মেয়েরা মাঠে অনুশীলনে আসছে।’’ ক্লাবের অ্যাথলেটিক্সের প্রশিক্ষক বিষ্ণুপদ মাহাতোর কথায়, ‘‘আগেও আমাদের মেয়েদের কেউ কেউ বেঙ্গল স্কুল ফুটবল খেলেছে, ম্যারাথন জিতেছে। কিন্তু স্টেট মিটে গীতার সাফল্য অন্য মেয়েদের মধ্যে একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে।’’

মানভূম ক্রীড়া সংস্থার অ্যাথলেটিক্স বিভাগের সম্পাদক গৌতমবাবু জানান, গীতার গত বারের সাফল্য দেখে তৈরি হয়ে ওর গ্রামেরই কাকলি মাহাতো এ বার স্টেট ক্রস কান্ট্রি চ্যাম্পিয়নশিপে সুযোগ পেয়েছিল। ৪২ জনের মধ্যে দৌড়ে সপ্তম হওয়া কাকলি বলে, ‘‘গীতার সাফল্য শুধু আমাকে নয়, অন্যদেরও উৎসাহিত করেছে।’’ পূজা, সুজাতা, সীমারাও জানানয়, গীতা তাদের ‘রোল মডেল’। গীতাও বলে, ‘আমি পারলে, তোরা পারবি না কেন?’

তিন সন্তানের মধ্যে ছোট মেয়ে গীতার এই ইচ্ছাশক্তি দেখে আশায় বুক বেঁধেছেন প্রান্তিক চাষি বাবা সুজিত মাহাতো ও মা রেণুকা মাহাতো। তাঁরা বলেন, ‘‘ওকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। ভাল প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলে, মেয়েটা অনেক উন্নতি করবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement