শুরু হয়েছে কাজ। নিজস্ব চিত্র
সমাধান সূত্র না মিললেও উৎসবের আগে ‘নমনীয়’ প্রশাসন। বুধবার থেকে আপাতত খুলে গেল কার্যত ‘অবৈধ’ পাথর শিল্পাঞ্চল।
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত পাকাপাকি না হলেও আপাতত স্বস্তিতে খাদান ও ক্রাশার মালিক, পাথর পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত ট্রাক মালিকরা। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন ওই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার শ্রমিকেরাও। বীরভূম মাইনস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজির হোসেন মল্লিক জানান, প্রশাসনের সম্মতিতে কালীপুজো পর্যন্ত আপাতত জেলা জুড়ে পাথর শিল্পাঞ্চল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘স্থায়ী সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা চলছে।’’ সংগঠনের সম্পাদক সৈফুল্লা শেখ বলছেন, ‘‘কিছু খাদান বৈধ। অধিকাংশ ক্রাশার বৈধ। সেটাকে সামনে রেখে, কারও কোনও সমস্যা না করে আপাতত শিল্পাঞ্চল চালাব।’’
‘অবৈধ’ হলেও অলিখিতভাবে এতদিন পুরো শিল্পাঞ্চল চালু ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বার্থে। পাথর বোঝাই লরি জরিমানা করে রাজস্ব আদায়ের পথ খোলা রেখেছিল প্রশাসন। মাস কয়েক আগে অবৈধ পাথর শিল্পাঞ্চল কতটা পরিবেশের ক্ষতি করেছে সে ব্যাপারে সমীক্ষা হয় জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে। জাতীয় পরিবেশ আদালত মাস চারেক আগেই প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিয়ে নির্দেশ দিয়েছিল অবৈধ ভাবে যেন পাথর শিল্পাঞ্চল না চলে। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতেই কড়া অবস্থান নেয় জেলা প্রশাসন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ খাদান ক্রাশার চালানো যাবে না বলে গত মাসের মাঝামাঝি মালিকদের জানিয়ে দেয় প্রশাসন।
শর্তপূরণ করে কিছু ক্রাশারকে ছাড়পত্র দেওয়ার রাস্তা খুঁজলেও অবৈধ খাদান থেকে পাথরের জোগান বন্ধ থাকলে কী করে শিল্পাঞ্চল চলবে সেই উত্তর অধরাই ছিল জেলা প্রশাসনের কাছে। ১ তারিখ থেকে পাথর শিল্পাঞ্চল অচল হতেই আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছিলেন তাঁরা। কেউ কেউ বিকল্প কাজের খোঁজে অন্যত্র যেতে শুরু করেছিলেন। সমাধান সূ্ত্র খুঁজতে খাদান ও ক্রাশার মলিক, ট্রাক মালিক, এলাকাবাসী, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, আদিবাসী সংগঠন সকলেই দফায় দফায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত উৎসবের আগে বহু মানুষের করুণ অবস্থার কথা ভেবে নমনীয় হয় প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলা জুড়ে থাকা পাথর শিল্পাঞ্চলের ২১৭টি খাদানের মধ্যে খাতায়-কলমে মাত্র ৮টি (চালু রয়েছে ৬টি) খাদান থেকে পাথর উত্তোলনের ছাড়পত্র রয়েছে। রায়তি জমি লিজ দেওয়া সংক্রান্ত জটিলতার জেরে বাকি খাদানগুলি সরকারি ভাবে বন্ধ। জেলায় পাথর ভাঙার কলও (ক্রাশার) রয়েছে ১২০০। চালু ছিল ১০০০টি। স্থাপনের ছাড়পত্র থাকলেও বহু ক্রাশারের চালানোর শংসাপত্র ছিল না বা সেগুলি পুনর্নবীকরণ করা হয়নি। তা পেতে হলে পরিবেশগত ছাড়পত্র থাকা আবশ্যক।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মাইনস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে খাদানগুলি বৈধ সেগুলিকে সামনে রেখে কাঁচামালের জোগান নিশ্চিত করতে। পাশাপাশি কী ভাবে অচলাবস্থা কাটিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিকে লিজের আওতায় আনা যায় বা কোনও রাস্তা বের হয় কি না সেই চেষ্টা চলছে। একই ব্যবস্থা ক্রাশারগুলির ক্ষেত্রেও। যেগুলির ‘কনসেন্ট টু অপারেট’ বা পরিবেশ গত ছাড়পত্র নেই সেগুলি যাতে দ্রুত ছাড়পত্র পাইয়ে দেওয়া যায় সে ব্যাপারেও তৎপর হচ্ছে প্রশাসন।
নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল বাণীওড় পঞ্চায়েতের ডহরবনি গ্রামের লক্ষ্মী টুডু, সুনীতা কোঁড়ারা বলছেন, ‘‘পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ হওয়ার পর সন্তানদের পাতে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দেওয়া যাচ্ছিল না। আজ থেকে সেই পরিস্থিতি কাটল।’’ একই বক্তব্য পাঁচামি এলাকার শ্রমিক পাথর শিল্পাঞ্চলে রামেশ্বর বাস্কে, জয় মুর্মুদেরও। পাথর শিল্পাঞ্চলকে পাহাড় বলেন স্থানীয় আদিবাসীরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘পাহাড় খুলেছে খুব খুশি হয়েছি। বন্ধ থাকলে পরিবারের পেট চলবে কী ভাবে?’’