মজুত হয়ে রয়েছে পাথর। রাজগ্রাম পাথর শিল্পাঞ্চলে। নিজস্ব চিত্র।
নলহাটি ও মুরারই পাথর শিল্পাঞ্চলের ৭০ শতাংশ পাথরই বাংলাদেশে রফতানি হত। সে দেশের অশান্ত পরিস্থিতির জন্য ৫ অগস্ট থেকে সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে, এক দিকে ক্রাশারে পাথর মজুত হয়েছে পড়ে রয়েছে। অন্য দিকে, জোগান বেশি থাকায় কমেছে পাথরের দামও। এই দুয়ের প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাথর খাদান, ক্রাশার ও পাথর পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতেরা। এই অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষতির বহর আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এমনকি, পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ করে দিতেও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
ক্রাশার,খাদান ও ট্রাক মালিকদের একাংশ জানান, বালুরঘাটের হিলি সীমান্ত, বনগাঁ, বসিরহাট ও মালদা সীমান্ত দিয়ে গড়ে হাজার থেকে দেড় হাজার পাথর বোঝাই গাড়ি প্রতি দিন বাংলাদেশে যেত। এ ছাড়া, রাজগ্রাম ও চাতরা থেকে রেলপথে রানাঘাট হয়ে পাথর বোঝাই মালগাড়িও বাংলাদেশে যেত। বাংলাদেশের অশান্ত অবস্থার জন্য দু’পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে সেই সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
পাথর ব্যবসায়ীদের দাবি, এই পরিস্থিতির ফলে রাজগ্রাম ও নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলে দৈনিক আট থেকে দশ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এই দু’পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে প্রতি দিন ৭০ শতাংশ পাথরই বাংলাদেশে যেত। সাধারণ সময়ে নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলে প্রতি দিন দুই হাজারের বেশি ট্রাক ও রাজগ্রাম পাথর শিল্পাঞ্চলে হাজার ট্রাক পাথর বোঝাই করত। সীমান্ত বন্ধ থাকায় তার অর্ধেকেরও কম ট্রাক পাথর বোঝাই করছে। এতে রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতিও হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্রাশারে কয়েক হাজার টন পাথর মজুত হয়ে রয়েছে। জোগান বাড়ায় কমেছে পাথরের দামও। কয়েক দিন আগেও এক টন পাথরের দাম ছিল ৬৫০ থেকে ৭৩০ টাকা। সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচশো টাকায়। সীমান্ত আরও কয়েক দিন বন্ধ থাকলে এই দুই পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
ক্রাশার ও ট্রাকের মালিক রাজগ্রামের পাপ্পা খান ও নলহাটির মানোয়ার আলিরা জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে জানি না। এ ভাবে বেশি দিন আমরা টানতে পারব না।নলহাটির পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনন্দ যাদব বলেন, “বাংলাদেশে ৫/৮, ৩/৪, ১/৪ ছাড়াও হাফ ইঞ্চি পাথর সরবরাহ হত। বাংলাদেশে রফতানি বন্ধের পাশাপাশি কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্য জেলায় বৃষ্টি হওয়ার পাথরের চাহিদা কমেছে। ক্রাশারে প্রচুর পাথর থাকলেও গ্রাহক নেই। এই অচল অবস্থা আরও কয়েক দিন চললে পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন মালিক ও শ্রমিকেরা।
মুরারই ১ ব্লকের বিডিও বীরেন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘‘বিষয়টি উদ্বেকজনক। পাথর শিল্পাঞ্চলের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও সৌরভ মেহতা বলেন, ‘‘পাথর শিল্পাঞ্চলের ক্রাশার, খাদান ও ট্রাক মালিকেরা এ বিষয়ে আমাদের এখনও কিছু জানাননি। তবে যাতে পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ না হয় সে বিষয়ে নজর দেওয়া হবে।’’