প্রতীকী ছবি
মক টেস্ট, কর্মশালা থেকে ভিডিয়ো বার্তা। স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত সিমেস্টারে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে গিয়ে যাতে পড়ুয়ারা সমস্যায় না পড়েন তার জন্য জেলার কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন নানা পদক্ষেপ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশ, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ওই পরীক্ষা নিতে হবে দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে। এর সঙ্গে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড এবং উত্তরপত্র স্ক্যান করে আপলোড করার জন্য দেওয়া হবে বড়জোর আধ ঘণ্টা। কিন্তু এই সীমিত সময়ে সব ধাপ মেনে সকলে উত্তরপত্র জমা দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বহু কলেজ কর্তৃপক্ষ। গ্রামগঞ্জের প্রান্তিক পরিবারের কলেজ পড়ুয়াদের নিয়ে চিন্তা বেশি। নতুন পদ্ধতি নিয়ে চিন্তায় পরীক্ষার্থীরাও। তাঁদের ভীতি দূর করতেই উদ্যোগী হয়েছে জেলার বিভিন্ন কলেজ।
জেলার সবক’টি কলেজই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, সেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে ১ অক্টোবর থেকেই শুরু হচ্ছে পরীক্ষা। তার প্রস্তুতি হিসেবে বীরভূম মহাবিদ্যালয় আজ, সোমবারই স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত সিমেস্টারের সকল পড়ুয়াদের একটি মহড়া পরীক্ষা বা মক টেস্ট নেবে। অধ্যক্ষ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমাদের কলেজে এমন অনেক পরীক্ষার্থী রয়েছেন যাঁরা দূরে থাকেন। অনেকেই স্মার্ট ফোনে সড়গড় নন। পরীক্ষার
দিন পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে কোথায় সমস্যা হচ্ছে যাতে তাঁরা আগেই বুঝতে পারেন সেই জন্যই এই ভাবনা।”
পরীক্ষা দিতে গিয়ে কী কী পদক্ষেপ করতে হবে, সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে একটি করে ভিডিয়ো তৈরি করে কলেজের নিজস্ব ওয়েবসাইটে দিয়েছে রামপুরহাট, হেতমপুর কৃষ্ণচন্ত্র কলেজের মতো একাধিক কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ স্পষ্ট বাংলা অনুবাদ করে ওয়েবসাইটে দিয়েছে অনেক কলেজ। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কেউ কেউ এমন মক টেস্টের ব্যবস্থা করেছেন।
মকটেস্ট না করালেও অনলাইনে কর্মশালা করে পরীক্ষার্থীদের জানাতে উদ্যোগী হয়েছে হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজ। অধ্যক্ষ গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মক টেস্ট কেউ দিতে না পারলে পাছে উদ্বেগে ভোগেন, সেই পথ এড়াতেই কর্মশালা হচ্ছে।’’ সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ তপন কুমার পরিচ্ছা বলছেন, ‘‘আমার কলেজ থেকে ৭০০ জন পরীক্ষা দিচ্ছেন। অনলাইন ক্লাস চলাকালীন কলেজের শিক্ষকেরা বিভিন্ন গ্রুপ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছিলেন। সেখানেই ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় জিজ্ঞাসা মেটানোর চেষ্টা চলছে।’’
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সময় দু’ঘণ্টা। ৬০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ৩ ঘণ্টা। তারপরই কলেজের দেওয়া ই-মেল আইডিতে উত্তরপত্র
পাঠাতে হবে। জমা দেওয়ার সময় নির্দিষ্ট আরও আধ ঘণ্টা। অনেকেই মনে করছেন সীমিত সময়ে উত্তরপত্র জমা দেওয়া যথেষ্ট সমস্যার হবে। উদ্বেগ সেখানেই। কারণ ব্যখ্যা করতে গিয়ে কলেজ শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, ‘‘প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষার জন্য স্মার্টফোন জোগাড় করলেও সঠিক সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র জমা দিতে সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ তাঁরা সকলে স্মার্টফোন সম্বন্ধে সড়গড় নন।’’
উত্তরপত্রের একাধিক পাতার ছবি তুলে সেগুলিকে পিডিএফ করে একসঙ্গে নির্দিষ্ট ই-মেলে পাঠাতে হবে। শিক্ষকদের মতে, অধিকাংশ পড়ুয়ার পক্ষেই এই ধাপগুলি সহজ নয়। হয়তো অনেককে সাইবার ক্যাফের সহায্য নিতে হবে। সেটা সময় ও খরচ সাপেক্ষ। অনেকের ইন্টারনেটের সমস্যাও হতে পারে। এটাও বলা হয়েছে অনলাইনে একান্তই কেউ উত্তরপত্র জমা দিতে
না পারলে তা তিনি কলেজে এসে জমা দেবেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, অধিকাংশ কলেজেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করেন। অনেকেরই বাড়ি থেকে কলেজ অনেক দূরে। তাই কলেজে পৌঁছে উত্তরপত্র জমা দেওয়ার ভাবনা মোটেই বাস্তব সম্মত নয়। রামপুরহাট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমরা পরীক্ষার্থীদের পাশে রয়েছি। চাইব সব ভাল ভাবে মিটুক। তবে উদ্বেগ আছে অস্বীকার করা যাবে না।’’