ফাইল চিত্র।
হাতির হানায় মৃতদের পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মোতাবেক এ বার মৃত ব্যক্তিদের পরিবারগুলির তথ্য সংগ্রহ শুরু করল বাঁকুড়া উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগ। জেলার বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত বন বিভাগ অবশ্য এখনও সেই কাজ শুরু করেনি। ডিএফও (পাঞ্চেত) সত্যজিৎ রায় বলেন, “তথ্য সংগ্রহ শীঘ্রই শুরু করব।” বন দফতর সূত্রে খবর, ২০১১ সাল থেকে হাতির হানায় মৃত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। হাতির হানায় মৃতদের নামের তালিকা দফতরের কাছে রয়েছে। সে তালিকা ধরেই মৃতের পরিবারের সঙ্গে রেঞ্জ দফতরগুলি যোগাযোগ করছে। মৃতের পরিবারের এক জন ব্যক্তির নাম চাকুরিপ্রার্থী হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
বন দফতর সূত্রে খবর, ২০১১ সাল থেকে বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগে ৮০ জন ও বাঁকুড়া দক্ষিণ বন বিভাগে ২৫ জন হাতির হানায় মারা গিয়েছেন। হাতির হানায় সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে জেলার বড়জোড়া রেঞ্জ এলাকায়। গত ন’বছরে সেখানে ২৫ জন মারা গিয়েছেন। ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) কল্যাণ রায় বলেন, “সমস্ত রেঞ্জ হাতির হানায় মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের থেকে চাকরির আবেদনপত্র নিচ্ছে। সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে।” ডিএফও (বাঁকুড়া দক্ষিণ) বিজয় কুমার বলেন, “হাতির হানায় মৃতদের পরিবারের তথ্য সংগ্রহ ও পরিবারের এক জনের কাছ থেকে চাকরির আবেদনপত্র নেওয়ার কাজ প্রায় সারা হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই রাজ্যের কাছে ওই তথ্য পাঠানো হবে।”
বাঁকুড়া জেলায় হাতির হানায় প্রায় প্রতি বছরই মৃত্যু ও ফসলের ক্ষতির ঘটনা ঘটে থাকে। এর সমাধানের দাবিতে ২০১৪ সাল থেকে অরাজনৈতিক ভাবে ‘হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সংগ্রামী গণমঞ্চ’ গড়ে আন্দোলনেও নেমেছেন বেশ কিছু মানুষ। ওই গণমঞ্চের জেলা সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, “২০১৭ সালে বাঁকুড়ার প্রশাসনিক সভাতেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হাতির হানায় মৃতের পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। খড়্গপুরের প্রশাসনিক সভাতে তিনি ফের ওই নির্দেশ দেওয়ার পরে, বন দফতর তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। তবে যত দিন না মানুষ চাকরি পাচ্ছেন, আমরা ভরসা করতে পারছি না।” শুভ্রাংশুবাবুর দাবি, “বছর-বছর হাতির হানায় মানুষের মৃত্যু আমরা চাই না। ময়ূরঝর্না প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করে জেলায় হাতি ঢোকার সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হোক।” জেলার বন-কর্তাদের আশ্বাস, হাতি ঢোকা রুখতে রাজ্য পরিকল্পনা করছে।
২০১৬ সালে গঙ্গাজলঘাটির রনিয়াড়ায় হাতির হানায় মারা যান প্রৌঢ় গোপাল লোহার। গোপালবাবুর ছেলে প্রশান্ত লোহার গঙ্গাজলঘাটি রেঞ্জে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। হাতির হানায় মৃত গঙ্গাজলঘাটির বাঁকাদহের বৃদ্ধ ভোলানাথ ভট্টাচার্যের নাতি রাহুল ভট্টাচার্যও চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। প্রশান্ত বলেন, “বাবার উপার্জনে পরিবার চলত। তাঁর মৃত্যুর পরে আর্থিক কষ্টে পড়ি। সরকারি চাকরি পেলে পরিবারটা ঘুরে দাঁড়াবে।” ভোলানাথ বলেন, “আমার বাবা তেমন কিছু করেন না। দাদু পরিবারের বড় ভরসা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে আর্থিক অনটনে কলেজের পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি। চাকরি পেলে ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে।”
ন’বছরের হিসেব
• ২০১১ সাল থেকে বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে হাতির হানায়।
• ওই সময়ে বাঁকুড়া দক্ষিণ বন বিভাগে ২৫ জন হাতির হানায় মারা গিয়েছেন।
• গত ন’বছরে জেলায় হাতির হানায় সব থেক বেশি মৃত্যু হয়েছে বড়জোড়া রেঞ্জে। মোট ২৫ জন।
• হাতির হানায় মৃতদের নামের তালিকা বন দফতরের কাছে রয়েছে। তা ধরে কাজ হচ্ছে।