—প্রতীকী চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের পরে লোকসভা ভোট। কিছুতেই রাজ্যের খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি নিজের খাসতালুকে তৃণমূলকে এগিয়ে রাখতে পারছেন না। যা নিয়ে শাসকদলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
দল সূত্রের খবর, জ্যোৎস্নার নিজের বুথ খাতড়া বাজারের কুরকুটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে মাত্র কয়েকটি ভোটে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে। ওই চত্বরের আর একটি বুথে বড় সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। শহরের অন্য বুথেও পদ্ম ফুটেছে।
লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া কেন্দ্র তৃণমূল জিতেছে। খাতড়া মহকুমার বাকি সাতটি ব্লকেও তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাসে যেন চোনা ফেলে দিয়েছে খাতড়া ব্লক।
খাতড়া, রানিবাঁধ ও হিড়বাঁধ ব্লক নিয়ে জ্যোৎস্নার বিধানসভা কেন্দ্র রানিবাঁধ।রাজনৈতিক মহলের মতে, খাতড়া ব্লকে তৃণমূলের ভোটে ঘাটতি মিটিয়েছে রানিবাঁধ ও হিড়বাঁধ ব্লকে ভাল ফল।
কিন্তু খাতড়া ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটিতে প্রায় পাঁচ হাজার ভোটে বিজেপির এগিয়ে থাকা তৃণমূল কর্মীদের মনে কাঁটার মতো খচখচ করছে। শুধু বৈদ্যনাথপুর ও খাতড়া ২ পঞ্চায়েতে সামান্য ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। এই ফলের কারণ নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
গত বছর পঞ্চায়েত ভোটেও শাসকদল জেলার বিভিন্ন ব্লকে ভাল ফল করলেও আশানুরূপ ফল করতে পারেনি খাতড়া ব্লকে। খাতড়া মহকুমার মধ্যে একমাত্র বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত গঠিত হয় খাতড়া ব্লকের গোড়াবাড়ি পঞ্চায়েতে।
তৃণমূলের ফল খারাপ ফল হয় দহলা ও ধানাড়া পঞ্চায়েতেও। সংখ্যাগরিষ্ঠ না থাকায় এই দুই পঞ্চায়েত গঠন করতে বেগ পায় তৃণমূল। ১৮ আসনের দহলা পঞ্চায়েতে ছ’টি আসন পায় তৃণমূল। অভিযোগ, বিরোধীদের ভাঙিয়ে বোর্ড গঠন করতে হয়। বিজেপি থেকে আসা দুই সদস্য প্রধান ও উপ-প্রধান হন।
১৫ আসনের ধানাড়া পঞ্চায়েতে পাঁচটি আসন পায় শাসক শিবির। অভিযোগ, বিজেপির তিন সদস্যকে ভাঙিয়ে এনে বিরোধীদের বাধা দিয়ে তৃণমূল এখানে বোর্ড গঠন করে। দুই জেলা পরিষদ প্রার্থী জিতলেও ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেন বিরোধী প্রার্থীরা। তারপরে লোকসভা ভোটে শাসকদলের এই বিপর্যয় কেন?
দলের একাংশের মতে, গোষ্ঠীকোন্দল অন্যতম প্রধান কারণ। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের কর্মীদের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তৎকালীন তৃণমূলের খাতড়া ব্লক সভাপতি সুব্রত মহাপাত্র। হামলাকারীরা মন্ত্রী জ্যোৎস্নার ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ উঠেছিল। যদিও জ্যোৎস্না তা মাননেনি।
লোকসভা ভোটের আগে খাতড়া বাজারে ব্যবসায়ী ও তাঁর কর্মীকে মারধরের ঘটনাতেও দলের এক পঞ্চায়েত সদস্য ও কর্মীর নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল। এক হামলাকারীকে জ্যোৎস্নার ভাইফোঁটা দেওয়ার ছবি সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে সরব হন বিরোধীরা। সে বারও জ্যোৎস্না ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর যোগ এড়িয়ে যান। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের আচরণ, কারও কারও ঠিকাদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এ সব বাসিন্দাদের একাংশকে তৃণমূল-বিমুখ করেছে বলে মনে করছেন তৃণমূল কর্মীদেরই একাংশ।
ফোন ধরেননি মন্ত্রী জ্যোৎস্না। জবাব আসেনি ফোনে পাঠানো বার্তারও। তবে খাতড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায় দলের ভরাডুবির দায় নিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্দ্বন্দ্বই এই ফলের কারণ। ভোটের সময় আমার একার দায়িত্বে সব ছিল না। সভা ঠিক করার ক্ষমতাও ছিল না। আমার গুরুত্ব কমিয়ে জেলা নেতৃত্বের তৈরি করে দেওয়া নির্বাচনী কমিটি প্রচারের দায়িত্বে ছিল। ওই কমিটির অনেকেই ভোট টানতে ব্যর্থ হয়েছেন।’’
তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা লোকসভার নব নির্বাচিত সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সব জায়গায় দল ভাল ফল করলেও কেন খাতড়ায় খারাপ ফল হল, তা পর্যালোচনা করা হবে। স্থানীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতা, রাজ্য নেতৃত্বকে জবাবদিহি করতে হবে। যে সব নেতৃত্ব ভাল কাজ করবে নিশ্চয় তাঁরা যোগ্য সম্মান পাবেন। ব্যর্থরা নিয়মেই বাদ যাবেন।’’