—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বাজেটে রাজ্যগুলিকে নতুন পর্যটন ক্ষেত্র তৈরিতে উৎসাহ দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় উৎসাহিত পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার বণিকমহল। একই সঙ্গে দেশের সমস্ত রাজ্যে বৈগ্রহিক পর্যটন ক্ষেত্র তৈরি করা বা ধর্মীয় পর্যটনে জোর দেওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে দুই জেলার অবহেলিত ধর্মীয় স্থানগুলিকে ঘিরে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরির আশা জেগেছে।
রাজ্য সরকার সম্প্রতি কিছু মন্দির ক্ষেত্র সংস্কারে উদ্যোগী হলেও পুরুলিয়া জেলা জুড়ে আনুমানিক নবম-দশম বা একাদশ শতাব্দীতে তৈরি নানা মন্দির বা দেউল অনাদরে পড়ে রয়েছে।
জেলার মন্দির গবেষক সুভাষ রায় মনে করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারও উদ্যোগী হলে ওই সব মন্দিরগুলি বা এই প্রত্ননিদর্শনগুলিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।’’
সুভাষ জানান, তেলকূপির অন্য মন্দিরগুলি পাঞ্চেত বাঁধের জলে ডুবে গেলেও একটি মন্দির এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু পঞ্চকোট রাজাদের তৈরি আঁচকদার তিনটি দেউলের মধ্যে একটি ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বাকি দু’টি দেউল দাঁড়িয়ে রয়েছে। যার চারটচি দেওয়ালেই অনুপম কারুকার্য রয়েছে।
পুঞ্চা ব্লকের কংসাবতী নদীর তীরে টুসামায় দু’টি দেউল ছিল। যার একটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, একটি আজও টিকে রয়েছে। এখানে প্রচুর দেউল এখনও ছড়িয়ে রয়েছে। পাড়া ব্লকের দু’টি দেউল, যার একটি ইটের রেখদেউল, অন্যটি প্রস্তর নির্মিত— এখনও কোনওরকমে রয়েছে। ওই ব্লকেরই দেউলভিড়ায় পাথরের তৈরি মন্দিরটি বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত।
সুভাষ বলেন, ‘‘কংসাবতী নদীর তীরে দেউলঘাটা মন্দির ক্ষেত্র আনুমানিক নবম-দশম শতাব্দীতে তৈরি। এখানে টেরাকোটার তিনটি দেউল ছিল যার একটি গত ২০০২ সালে ধসে পড়েছে। এ রকম আরও একাধিক মন্দির বা প্রত্নসম্পদ রয়েছে যা কেন্দ্রীয় সহায়তা পেলে রক্ষা পাবে।
অন্যদিকে এই মন্দির ক্ষেত্রগুলিকে ঘিরে পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে।’’ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে গড়পঞ্চকোটের মন্দিরগুলি সংস্কার করছে। পাকবিড়রার অসাধারন জৈন প্রত্নসম্পদগুলিকে রক্ষা করার জন্য একটি যাদুঘরও তৈরি করেছে।
বাঁকুড়ার প্রাচীন এক্তেশ্বর শিব মন্দিরের পুরোহিত বৈদ্যনাথ দেওঘরিয়া বলেন, “প্রাচীন এই মন্দির দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন ছুটে আসেন। যদি এই মন্দিরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সরকারি ভাবে তুলে ধরা হয়, তাহলে এলাকার প্রচুর উন্নয়ন হবে।”
মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরে একসময় বৈষ্ণবীয় জোয়ার এসেছিল। মল্লরাজাদের গড়া প্রাচীন মন্দির দেখতে সারা বিশ্বের মানুষ এই শহরে ছুটে আসেন। শহরের প্রবীন বাসিন্দাদের কথায়, শ্রীনিবাস আচার্য থেকে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, শ্রীমাসারদা— সবার স্মৃতি এই শহর আঁকড়ে ধরে রয়েছে। ফলে ওই স্থানগুলিকে আরও ভালও করে তুলে ধরলে পর্যটকদেরও আকর্ষণ বাড়বে। বিষ্ণুপুরের প্রাচীন ডিহর গ্রামের ষাঁড়েশ্বর মন্দির ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সংরক্ষণ করছে। মন্দিরের গাজন উৎসব কমিটির তরফে অভিজিৎ সিংহ বলেন, “ষাঁড়েশ্বর মন্দিরকে অবশ্যই ধর্মীই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার দরকার রয়েছে।’’
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরুলিয়া জেলাতে একাধিক প্রাচীন মন্দিরক্ষেত্র, মৌতোড়ের কালীক্ষেত্র, আনাড়া বাণেশ্বরধাম ও চিড়কা গৌরীনাথধাম মন্দির রয়েছে। এগুলিকে ঘিরে পর্যটনের উন্নয়ন ঘটবে কি না তা রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার উপরেই নির্ভর করছে। আমরা অযোধ্যার রামমন্দিরকে ঘিরে সেটাই করে দেখিয়েছি।’’
যদিও পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার কটাক্ষ, রাজ্যে পালাবদলের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই রাজ্যে পর্যটনের জোয়ার এসেছে। গড়পঞ্চকোটের মন্দিরগুলির সংস্কার হচ্ছে। পঞ্চকোট রাজাদের তৈরি কাশীপুরে কিছু মন্দির ছাড়াও জেলায় যে সমস্ত জায়গায় এই ধরনের নিদর্শন রয়েছে আমরা পরবর্তীকালে সেগুলির সংস্কারেরও প্রস্তাব দেব।’’
কিন্তু বৈগ্রহিক পর্যটন ক্ষেত্র বলতে বাজেটে ঠিক কী বলতে চাওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয় অনেকের কাছেই। তবে কি বিগ্রহহীন ঐতিহ্যশালী ধর্মীয়স্থান কেন্দ্রের সহায়তা থেকে দুয়োরানিই থাকবে?