রান্না হয় এ ভাবেই। গোবিন্দপুরে। ছবি: সঙ্গীত নাগ
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যাওয়ার মূল রাস্তায় দেওয়াল তোলার জন্য বন্ধ যাতায়াত। ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুরপথে ব্যস্ত রাজ্য সড়ক দিয়ে কেন্দ্রে যেতে নারাজ অভিভাবকেরা। গত কয়েক বছর ধরে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের গোবিন্দপুর গ্রামের প্রান্তে থাকা গ্রন্থাগারের বারান্দাতেই তাই চলছিল রান্নাবান্না। তবে গ্রন্থাগারে সংস্কারের কাজ
শুরু হওয়ায়, শেষ পর্যন্ত রাস্তার পাশে, খোলা জায়গায় শুরু হয়েছে রান্নার কাজ।
তবে ব্যস্ত রাস্তার ধারে ধুলোবালির মধ্যে এ ভাবে শিশু-প্রসূতিদের জন্য রান্না করা নিয়ে আপত্তি তুলছেন অনেকে। ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরেই রয়েছে মহকুমাশাসকের (রঘুনাথপুর) কার্যালয়। মহকুমা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকের কার্যালয়ের নাকের ডগায় কী ভাবে এমন চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন রঘুনাথপুর ১ ব্লকের সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক রীতেশ দিন্দা।
রঘুনাথপুর ১ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কার্যালয়ের পাশে থাকা গোবিন্দপুর গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ির কেন্দ্রে উপভোক্তার সংখ্যা ৭৫ জন। গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ জানান, বছর পাঁচেক আগে ওই এলাকায় মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিক, কর্মীদের থাকার আবাসন তৈরির কাজ শুরু হয়। তার সীমানা প্রাচীর দেওয়ার জন্য ওই কেন্দ্রে যাওয়ার মূল রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প পথে অনেকটা ঘুরে ব্যস্ত রঘুনাথপুর-চন্দনকেয়ারি রাজ্য সড়ক দিয়ে কেন্দ্রে যাওয়া গেলেও সেই রাস্তা ধরতে নারাজ অনেকে।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী আন্না দাস জানান, শেষমেষ কোনও উপায় না-দেখে সকলের সঙ্গে আলোচনার পরে, গোবিন্দপুর গ্রামের সামনে বীণাপাণি পাঠাগারের বারান্দায় রান্না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো রান্না শুরুও হয়েছিল। পরে করোনা সংক্রমণের কারণে কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। গত মাসের ১৮ তারিখে কেন্দ্র খোলার পরে, পাঠাগার কর্তৃপক্ষ জানান, পাঠাগারে আর রান্না করা যাবে না।
আন্না বলেন, ‘‘শিশু ও প্রসূতিদের রান্না করা খাবার দেওয়া বন্ধ করা চলবে না। তাই বাধ্য হয়েই পাঠাগারের এক দিকে রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় রান্না করা হচ্ছে।” তবে রাস্তা দিয়ে অহরহ যাতায়াত করা ট্রাক্টর, গাড়ি চলাচলে ধুলোর হাত থেকে খাবার বাঁচানো মুশকিল হচ্ছে বলে দাবি। প্রকল্পের সুপারভাইজ়ার শমিতা দে বলেন, ‘‘গোবিন্দপুর গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সমস্যাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। খোলা জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ ভাবে শিশু ও প্রসূতিদের জন্য খাবার তৈরি করা উচিত নয়।”
এই পরিস্থিতিতে গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ দাবি তুলেছেন, হয় সীমানা প্রাচীরের একাংশ ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার মূল রাস্তা খুলে দেওয়া হোক বা পাঠগারের আশপাশে সরকারি জায়গায় তৈরি করা হোক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য চঞ্চলা বাউড়ি জানান, সমস্যা মেটানোর দাবি প্রশাসনে জানানো হয়েছে। ব্লকের সিডিপিও রীতেশ দিন্দা বলেন, ‘‘গোবিন্দপুর গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সমস্যা নিয়ে মহকুমাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী রান্নাঘর তৈরি করা যায় কি না, দেখা হচ্ছে।”